আফগানিস্তানের কান্দাহারে আল কায়েদার হয়ে লড়াই করার সময় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জিহাদি তারিক ওরফে সোহেল নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস-এর প্রধান অসীম উমরের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন দাবি করা হয়। ২৬ এপ্রিল সেই বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশি ইংরেজী দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন খবরটি জানিয়েছে। বুধবার ম্যাসেজিং অ্যাপস টেলিগ্রামে অসীম উমর ওই বিবৃতি দেন বলেও উল্লেখ করেছে সংবাদপত্রটি। ওই বিবৃতিতে সোহেলকে আল কায়েদার বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলামের প্রধান বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ঘটনাটি কবেকার তা ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি। এর আগে গত মাসেও সোহেলের নিহত হওয়ার খবর জানা গিয়েছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের প্রিয় যে ভাইটি ঢাকার চাকচিক্য ছেড়ে ওয়াজিরিস্তানে হিজরত করেছিলেন, সেই তারিক ভাই (আল কায়েদার বাংলাদেশবিষয়ক প্রধান) বাংলাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থার বসন্ত ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশায় কান্দাহারের মরুভূমিতে পানি সরবরাহ করতে গিয়ে মারা গেছেন।’
এদিকে মঙ্গলবার আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরিও আলাদা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে সোহেলের সঙ্গে নিহত হওয়া সহযোগীদের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন, কাজী আব্দুল আজিজ ওরফে আব্দুল হালিম, ইয়াকুব ওরফে সাদ্দাম হোসেন, আসাদুল্লাহ ওরফে নাজিমুদ্দিন মাইমুন, আবু ইব্রাহিম ওরফে সাইফুল ইসলাম হাসান এবং আবু বকর ওরফে আনুজ হাসিব। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয়ের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
সংবাদপত্রটি জানায়, গত মাসে আল কায়েদার আস-শাহাব মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকে প্রথমবারের মতো সোহেলের মৃত্যুর খবরটি জানা যায়। আনসার আল ইসলামের সদস্যরা দাওয়াহিল্লাহ অনলাইন ফোরামে সোহেলের মৃত্যুর ব্যাপারটি অবহিত করার পর তা প্রকাশ পায়।
মেজর (বরখাস্তকৃত) জিয়াউল হক ওরফে জিয়া হলেন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা একমাত্র যার কথা সবার জানা আছে। তাকে আনসার আল ইসলামের অপারেশনাল উইং চিফ বলে মনে করা হয়। গত বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, তারা জিয়াকে নজরদারিতে রেখেছেন, কিন্তু এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (বর্তমান আনসার আল ইসলাম) সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠাতা মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানি ২০১৩ সালের আগস্ট থেকে জেলে আছেন। তার স্থলাভিষিক্ত কে হয়েছেন সে বিষয়টিও এখনও স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, তামিম আল আদনানি এখন সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আদনানি বর্তমানে কোথায় আছেন কিংবা এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানা যায়নি। তার ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত বিদ্বেষমূলক ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে। অসমর্থিত সূত্র বলছে, তিনি এখন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাবিরোধী নির্যাতনের বদলা নেওয়ার জন্য লড়াই করতে বাংলাদেশের মুসলিম তরুণদের আহ্বান জানিয়েছিল একিউআইএস। ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন ও ভাস্কর্য প্রত্যাহারসহ হেফাজতের ১৩ দফা দাবিতে সমর্থন দিতেও দেখা গেছে তাদের।
২০১৪ সালের শেষের দিকে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জিহাদ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা গঠিত হয়। এর সদর দফতর করা হয় পাকিস্তানে। বাংলাদেশে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের জন্য একিউআইএস এর পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করার পর ২০১৫ সালে এর বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।