নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পল্লীতে এক ব্যক্তির লাশ দাফনে বাধাপ্রদান করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় তাদের হামলায় অন্তত ৭ জন এলাকাবাসী আহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দুপুরে তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া গ্রামে। এ ঘটনায় রবিবার (১৭ মে) সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগি পরিবারটি।
জানা যায়, জেঠুয়া গ্রামের মৃত মোমিন উদ্দীন শেখের পুত্র মোঃ নূর আলী শেখ (৬০) দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ ডায়াবেটিকস, রক্তশুন্যতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়িত ছিলেন। গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নূর আলী শেখের লাশ দাফন করার সময় প্রতিপক্ষের লোকজন লাশ দাফনে বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা খোঁড়া কবরটিতে কলাগাছ রেখে ভরাট করে দেয়। এ সময় এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তাদেরকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
সদ্য বিধবা নূর আলী শেখের স্ত্রী ফজিলা বেগম জানান, একই গ্রামের মৃত সাদেক আকুঞ্জীর পুত্র রহমত আকুঞ্জি ও কামরুল আকুঞ্জির সাথে তাদের ৬৩ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। উক্ত জমির ২৭ ও ৬২ সালের রেকর্ড, মাঠ পর্চা, নামপত্তন, দাখিলাসহ সকল কাগজপত্র তাদের রয়েছে। প্রায় ৫০ বছর উক্ত জমি তাদের দখলেও রয়েছে। শুক্রবার সকালে তার স্বামী মোঃ নূর আলী শেখ হঠাৎ মারা গেলে উক্ত ভিটেবাড়ি ও কবরাস্থানের জমিতে লাশটি দাফনের প্রস্তুতি নেয়। কবর খোড়ার কাজও সম্পন্ন হয়।
এরইমধ্যে প্রতিপক্ষরা একই গ্রামের মৃত সাদেক আকুঞ্জীর পুত্র কামরুল ইসলাম আকুঞ্জী, রহমত আকুঞ্জি ও তার পুত্র ওজিয়ার, খোরশেদ আলম ও জুলফিকার আকুঞ্জীসহ ৮/১০ জন এসে আকস্মিক কবরের মধ্যে কলাগাছ দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। এ সময় গ্রামবাসী এগিয়ে আসলে তারা ফয়েজউদ্দিন (৬৫), রিয়াজউদ্দিন (৬০), বজলু শেখ (৪৫),গফ্ফার শেখ (৫২), আমজাদ শেখ (৫৩), মিজানুর জোর্য়াদ্দার (৫০),মহব্বত শেখ (৫৫) সহ ১০/১২ জন প্রতিবেশীকে পিটিয়ে জখম করে।
ফজিলা বেগম আরও জানান, শুক্রবার রাতে আহতদের হাসপাতালে দেখলে আসলে তালা থানার এক এসআই তাকে মারতে উদ্যত হয় এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে ঐ দারোগার ভয়ে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
তবে তালা থানার ঐ এসআই জানান, তিনি হাসপাতালে গিয়ে কাউকে হুমকি দেননি কিংবা গালিগালাজও করেননি।
আহতরাসহ এলাকাবাসী জানায়, রহমত গং এই জমির (কবরাস্থানের) ওয়ারেশ নয়, আমাদের জীবদ্দশায় দেখছি মৃতঃ নূরআলী তার নানার ওয়ারেশ সুত্রে উক্ত জমি ভোগদখল করে আসছে। তারা আদৌ এই পরিবারের কেউ নন। কিন্ত দীর্ঘদিন নুর আলীর অসুস্থ্যতার সুযোগে গত বছর তিনেক পূর্ব থেকে রহমত গং ওয়ারেশ দাবী করে জবর দখল করার পায়তারা করে আসছে।
এলাকাবাসী আরও জানায়,বিষয়টি তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ থানা প্রশাসনকে অবহিত করলে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন সরেজমিনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরআগে গ্রামবাসী লাশটির দাফন কাজ সম্পন্ন করেন।
জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, জমিটি প্রায় ৫০ বছর ধরে মোঃ নূর আলী শেখ ভোগ দখল করে আসছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তবে লাশটি তারা দাফনের ব্যবস্থা করেছেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে তালা থানার ওসি মেহেদী রাসেল জানান, বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, একজন মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে বাধাঁ প্রদান এবং এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা সত্যিই অমানবিক।
পূর্ববর্তী পোস্ট