নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় নতুন আক্রান্ত ২৪ জনের মধ্যে ১৯ জনের বাড়ি দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। বাকী ৪ জনের বাড়ি সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের দরবাস্তিয়া গ্রামে। কিন্তু দেবহাটার ১৯ জনের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ৫ জনের বাড়ির ঠিকানা উদ্ধার করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বা মোবাইল নং সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে তাদের খুজে বের করাটাও কষ্ট কর হয়ে পড়েছে।
এনিয়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে দেবহাটা উপজেলাসহ গোটা সাতক্ষীরা জেলায়। তারা কোথায় কোথায় গিয়েছে। কাদের সংস্পর্শে গিয়েছে। কাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে দেবহাটাসহ সাতক্ষীরাবাসী। এনিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সাতক্ষীরায়।
গত ১ মে নারায়গঞ্জ থেকে ট্রাক যোগে দেবহাটায় পৌছায় ওই ২৪ জন ব্যক্তি। তাদের কে পাশ্ববর্তী খানবাহাদুর আহছান উল্লাহ কলেজে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ৩ মে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। কিন্তু ৫ মে তাদের একজনের পজেটিভ আসে বাকি সবাই নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর ১৪ মে তাদের কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে দ্বিতীয় দফায় নমুনা সংগ্রহ করে রিপোর্ট আসার আগেই তড়িঘড়ি করে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদি তাদের আরো ৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইন করার কথা বলা হয়েছিল বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল লতিফ। কিন্তু তারা বাড়ি ফিরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। হাট- বাজারে দাপিয়ে বেড়াতে থাকে তারা। ১৭ মার্চ তাদের প্রত্যেকের করোনা পজেটিভ আসে।
সচেতন মহল মনে করছেন ওই ২৩ জনকে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেওয়ায় গোটা সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। তাদের রিপোর্ট আসার পূর্বেই ছেড়ে দেওয়া কোন ভাবেই উচিত হয়নি। যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তারা প্রত্যেকেই করোনার সন্দেহের তালিকায় ছিল। অথচ তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বার সংরক্ষণ না করে তাদের ছেড়ে দেওয়াটা দায়িত্বহীনতার পরিচয় বলে মনে করেন। যাদের সন্দেহ করা হলো তাদের রিপোর্ট আসার পূর্বেই ছেড়ে দেওয়াটা কোন দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে না।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেবহাটার একজন ইউপি সদস্য বলেন, যাদের কে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল, তাদের খাবারসহ প্রয়োজনী সামগ্রী উপজেলা প্রশাসনের সরবরাহ করার কথা থাকলেও মাত্র একদিন তাদের কে খাবার দেওয়া হয় উপজেলা প্রশাসন থেকে। এরই মধ্যে গত ৪ মে আরো ১ জনের করোনা পজেটিভ আসলেও সেটি ঢালাও ভাবে প্রচার হয়নি।
এবিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিনের ব্যহৃত মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন সাফায়েত বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তাদের ২ সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। সুতরাং তাদের পজেটিভ হওয়ার কথা নই। কিন্তু মাঝে মাঝে মধ্যে এধরনের বিব্রতকর ঘটনা ঘটে। এবিষয়ে আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি।
এবিষয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক আবু রায়হান তিতু বলেন, এটা খুবই খারাপ কাজ হয়েছে। আমরা মনে করে এধরনের বুদ্ধিহীনতার কাজ করে দেবহাটার দেড়লক্ষ মানুষকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এঘটনার পর থেকে ইউএনও সাহেব কারো মোবাইল রিসিভ করছেন না। অথচ উচিত ছিলো দেবহাটা এখনই লকডাউন করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি করা হয়নি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান অফিসিয়াল ফেসবুকে পেজে বলেন, গভীর রাতে পুলিশ তাদের আটক করে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইউএনও কে জানানো হয়। তাদের পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলো। মেয়াদ পূর্ণ হওয়া এবং রিপোর্ট আসার আগেই পুলিশকে না জানিয়ে কারা ছেড়ে দিল। জনতার প্রশ্ন জনতাই উত্তর খুজে দেখুক। রাতের বেলায় এত কষ্ট করে কি লাভ হল।