আসাদুজ্জামান : দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নুর ইসলাম ও বিটিভির সংবাদদাতা মোজাফ্ফর রহমানের নেতৃত্বাধীন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দখলদার কমিটির দায়ের করা মিস আপিল না মঞ্জুর করেছে জেলা জজ আদালত। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান তাদের দায়ের করা মিস আপীল মামলাটি উভয় পক্ষের শুনানীর পর না-মঞ্জুর করেন।
এর পূর্বে গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ জিএম নুর ইসলাম ও মোজাফ্ফর রহমানের নেতৃত্বাধীন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কমিটির বিরুদ্ধে রায় প্রদান করে সাতক্ষীরা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ নাছির উদ্দিন ফরাজি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপির দায়ের করা মামলায় উভয় পক্ষের শুনানীর পর ঐ রায় প্রদান করে আদালত। আদেশে পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রেসক্লাবের আর্থিকসহ সকল দায় দায়িত্ব আবু আহমেদ-মমতাজ আহমেদ বাপির নেতৃত্বাধীন কমিটির নিকট হস্তান্তরের জন্য বলা হয়।
গত ২২ জানুয়ারীর পর থেকে দায়িত্ব হস্তান্তর পর্যন্ত সকল প্রকার অনিয়মিত আর্থিক লেনদেনের জন্য জিএম নুর ইসলাম ও মোজাফ্ফর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়ী থাকবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে দায়িত্ব হস্তান্তরের এক মাসের মধ্যে গত ৪ জানুয়ারী ২০২০ তারিখে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় অনুমোদিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যকরি কমিটি গঠনের লক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বলা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারী সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় ৬ ফ্রেব্রুয়ারী ২০২০ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনী তপশীল ঘোষণা করা হয়। এলক্ষ্যে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন পত্র বিক্রির পূর্বেই ২২ জানুয়ারী জিএম নুর ইসলাম ও মোজাফ্ফর রহমানের নেতৃত্ব সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব দখল করা হয়।
তারা কোনরকম বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই কমিটি ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ আবু আহমেদসহ অন্যান্যরা বাদী হয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখ সাতক্ষীরা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ২৩/২০২০ মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলায় বাদী পক্ষের নিষেধাজ্ঞার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই রায় প্রদান করেন।
ঐ রায়ে আরো বলা হয়, “বাংলাদেশ একটি স্বীকৃত গণতান্ত্রিক দেশ এবং সেই হিসেবে দেশের সকল স্তরের কমিটি বা নেতৃবৃন্দ অবশ্যই গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হতে হবে। এটাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন তথা সংবিধানের স্প্রিরিট। একটি কল্যাণকর ও প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে কতিপয় সদস্য কতৃক কোন আইনগত প্রক্রিয়া ব্যতীত কোন নির্বাচিত কমিটিকে দখলচ্যুত করা দেশের আইন শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখনোর সমান বিবেচিত হয়, যা বেআইনী এবং আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদ মাধ্যম ফোর্থ স্টেট হিসেবে পরিচিত হয়। আর ঐ সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের দ্বারা এহেন অগণতান্ত্রিক বেআইনী কাজ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রত্যাশা করে না। নির্বাচিত কমিটি কোন অন্যাই বা অনিয়ম করলে রাষ্ট্রের পক্ষ হতে তা সুরাহা করার জন্য আদালতসহ বিভিন্ন ফোরাম রয়েছে। কিন্তু তার শরণাপন্ন না হয়ে বিাদীপক্ষরা বাদী পক্ষের মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বেই দখলচ্যুত করে নিজেরা কমিটি ঘোষণা করায় তাদের ঐ কার্য শুরুই হতে বাতিল বলে আদালতের নিকট প্রতিয়মান হয়।
ফলে একটি বাতিল কমিটি দ্বারা স্থানীয় প্রেসক্লাবের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। তাই অনতিবিলম্বে সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির নিকট প্রেসক্লাবের নিয়ন্ত্রণসহ দায়িত্ব হস্তান্তর প্রয়োজন বলে অত্র আদালতের নিকট প্রতিয়মান হয়” বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।