কে এম রেজাউল করিম দেবহাটা ব্যুরো : পাখি শুধু পরিবেশের ভারসাম্যই রক্ষা করে না, উদ্ভিদের সার জোগান থেকে শুরু করে বনভূমির পোকা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের পাখি। কাক এবং শিকারি বাজেরা পোষা হাঁস-মুরগির ছানা নিয়ে যায়। এছাড়া পাখি মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। বরং পাখিরা যুগ যুগ ধরে মানুষের উপকার করে আসছে। পাখিরা যদি সাহায্য না করত, তাহলে এই পৃথিবীতে মানুষের বসবাস করাটাই দায় হয়ে পড়ত।
ক্ষেতখামার, বনজঙ্গল, ফল ও ফুলের বাগানে অসংখ্য ছোটবড় নানান জাতের পোকামাকড় আছে। তারা গাছপালা খেয়ে নষ্ট করে ফেলে। আর এসব পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশ ঠিক রাখে পাখির দল। এছাড়া গাছের ডাল এবং গুঁড়ি থেকে পোকা খুঁটে খুঁটে খায় অনেক পাখি। আবার ঘরের আশপাশে থাকে যেসব বিষধর পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ, তাদের ধরে ধরে খায় পাখিতে। গরু ও ছাগলের লোমের ভেতর এক ধরনের পোকা বাসা বাঁধে। পাখিরা সেসব পোকাও খুঁটে খুঁটে খায়। যাই হোক এতসময় বলছিলাম পাখিদের উপকারের কথা। এবার না হয় পাখিদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা যাক।
যখন গোটা বিশ্ব মহামারি করোনায় আক্রান্ত। সাবাই নিজ নিজ নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিচ্ছেন। ঠিক সেই সময় নতুন প্রজন্মকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখাতে মা পাখিটি নিজের জীবনবাজি রেখে চলেছে। এতক্ষণ যে কথা বলছিলাম সেটি সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসের এই ছোট্ট ঘুঘু পাখির কথা। সবদিকে করোনার ভয়। আর সেই ভয় কাটিয়ে বিলুপ্ত প্রজাতির এক জোড়া ঘুঘু আশ্রয় নিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের বারান্দায়। যেটি মেঝে থেকে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ধরা যায়। তারপরেও পাখির বাসাটি রয়েছে অতি নিরাপত্তার মধ্যে। পাখিটি যে খানে বাসা বানিয়ে ডিম নিয়ে বসে আছে তার বিপরিতে রয়েছে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের একটি সিসি ক্যামেরা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে। তারপরেও কোন রকম প্রভাব পড়ে না পাখিটির আশ্রয়স্থলে। আর দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও এটি সবসময় দেখভাল করেন। পাখিটি যাতে তার কাজে কোন রকম বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্যও রয়েছে নির্বাহী কর্মকর্তার বিশেষ নির্দেশনা।
এদিকে মা পাখিটি ডিম নিয়ে বসে আছেন আগামী প্রজন্মকে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য। আর কিছু দিন গেলেই হয় ডিম ফুঁটে বেরিয়ে আসবে ছোট্ট পাখির ছানা। আর তাদের কিচিমিচি ডাকে মুখোরিত হবে চারপাশ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসে সেবা নিতে আসা রফিকুল জানান, ইউএনও’র অফিসে এসে রুমে ঢুকতে দেখি একটি পাখি ডিমে বসে আছে। দেখে খুবই ভালো লাগল। সত্যি এত ব্যাস্থ একটা অফিসের বারান্দায় পাখির বাসা করে সেখানে ডিম ফুটে বাচ্চা তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আমার কাছে অবাক লাগার মত। এভাবে যদি আমরা পাখিদের নিরাপদ রাখতে পারি তাহলে আমাদের পরিবেশ আরো সুন্দর হবে। আর পাখিদের গানে আমাদের পরিবেশ মুখোরিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী আব্দুল জলিল জানান, পাখিটি যখন বাসা বানানো শুরু করে তখন থেকে চোখে চোখে রেখেছি। কোন প্রকার সমস্যা যাতে না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রেখেছি। আমি নিজে এসে প্রতিদিন পাখিটি দেখে যায়। অনেকে এসে পাখিটি দেখে ছবি তুলে নিয়ে যায়।
পৃথিবীর সকল জীব একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে একে অন্যের উপর এই নির্ভরশীল। পাখি, উদ্ভিদ অরণ্যকে পরিপূর্ণতা দান করেছে আর মানুষ পাখি থেকে তার বাস্তব প্রয়োজন ও বিনোদনতৃষ্ণা মিটিয়েছে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও পাখির মাধ্যমে তার মেধা ও কল্পনাকে বিকশিত করেছে। পাখি থেকে মানুষ উড়োজাহাজের চিন্তা ভাবনা করেছে। তাই মানুষের জীবনের সাথে পাখিদের জীবন যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।