কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা : জীবন সংগ্রামে সমাজ, পরিবারের নানা বাধা কাটিয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন দেবহাটার ৫ নারী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এসব নারীদের ৫টি ক্যাটাগরীতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় খুঁজে বের করে সম্মাননা প্রদান করেছে। এসব নারীদের আত্মতৃপ্তি ও অনুস্মরণীয় করতে তাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এদের জীবনে রয়েছে আলাদা আলাদা জীবন কাহিনী। তাদের সেই সংগ্রামের কাহিনী ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হলো:
সফল জননী ফরিদা হক। সফল জননী অভাব, অনটন ও বঞ্চনার করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসা জয়িতাদের সাফল্যের গল্পগুলো আসলেই ঈর্ষণীয়। দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মকে সঙ্গী করে জীবন যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা আজ উদ্ভাসিত পাশাপাশি অনুকরনীয় দৃষ্টান্তও বটে। তাদেরই একজন মিসেস ফরিদা হক। বয়স ৬৫’র কোঠায়। জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে আজ তিনি গর্বিত। শুধু তাই নয়, সফল জননী হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছেন তিনি। সফল এ জননী “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক কর্মসুচির আওতায় সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলায় উপজেলা পর্যায়ে সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে নিবার্চিত হয়েছেন। শুধু তাই নয় , সাতক্ষীরা জেলায় জেলা পর্যায়ে সফল জননী হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছেন তিনি। জয়িতা এ নারী ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা, মহকুমা বশিরহাটের সন্দেশখালির পায়রাটুনি গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৃত মুন্সি নুর উদ্দীন আহমেদ ও মা মৃত শরিফুন্নেসা’র কোল আলোকিত করে ১৯৫৫ সালের ১৫ই অক্টোবর মিসেস ফরিদা হক জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। আমতলী সরকারি প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক স্তর শেষ করেন। এরপর আমতলী হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে তিনি অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। একই বছরে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালে ফরিদা হকের বাবা তার জন্মস্থান অর্থাৎ ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে বিনিময় সূত্রে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বদরতলা গ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বদরতলা আসার পর ফরিদা হক’কে তার বাবা স্থানীয় হাইস্কুলে নবম শ্রেনিতে ভর্তি করে দেন। কিন্তু তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। প্রথমত এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর, এরপর ৫ ভাই ও ৫ বোনের বড় সংসার, সবাইকে পড়ালেখা শেখানো, সংসারের খরচ যোগানো তার বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি। যে কারনে ফরিদা হকের লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার ইচ্ছা পূরণ হয়নি। এরপর ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পারিবারিকভাবে দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা ইউনিয়নে টাউনশ্রীপুর গ্রামের আব্দুল হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তখনও তার স্বামী ছাত্র ছিলেন (মানিকগঞ্জ জেলার দেবেন্দ্র কলেজে বি.কম পড়তেন)। শ্বশুরবাড়ীতে যৌথ সংসার, শ্বশুর শ্বাশুড়ী, দেবর, ননদ তাদের সন্তানরা সব মিলিয়ে অনেক লোকজন। তাদের জন্য রান্না করা, খাওয়ানো, তাদের পরিচর্যা করা সব মিলিয়ে সারা দিনে অনেক পরিশ্রম হতো। এর মধ্যে ১৯৭৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তার প্রথম সন্তান ও ৯ বছরের মধ্যে আরও ২ সন্তান জন্মগ্রহণ করে। লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রথমত যৌথসংসার, দ্বিতীয়ত স্বামীর উপার্জন না থাকায় সংসার জীবনটা অনেক টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। তাই তিনি স্বপ্ন দেখেন সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করার। এরপর তার স্বামী ১৯৭৮ সালের ১২ জুন উপজেলা কৃষি অফিসে প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক পদে চাকুরী লাভ করেন। সবশেষ তিনি দেবহাটা উপজেলার কৃষি অফিসে কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে অবসরকালিন জীবন যাপন করছেন। স্বামীর চাকুরী লাভের পর একটু আশার আলো সামনে ভেসে ওঠে। এদিকে আস্তে আস্তে ছেলেমেয়েরাও বড় হতে থাকে, তারা স্কুলে যাওয়া শুরু করে। স্বামীর সামান্য উপার্জনে সংসার চালানো, ছেলে মেয়ের পড়া লেখার ব্যয় ভার চালানো খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। তখন তিনি সংসার সামলানো, সন্তান লালন পালনের পাশাপাশি হাঁস মুরগী ও ছাগল পালন করা শুরু করেন। হাঁস মুরগী যে ডিম দিত সে ডিম সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারের জন্য কিছু রেখে বাকীটা বিক্রি করতেন, মুরগী একটু বড় করে মাংসের জন্য বিক্রি করতেন, একই সাথে ছাগল বড় করে বিক্রি করতেন। এসব বিক্রয় লব্ধ অর্থ তিনি সন্তানদের পড়া লেখার পিছনে ব্যয় করেছেন। স্বামী চাকুরী করার কারণে বাহিরে বেশী সময় দিতেন। সংসার পরিচালনা ও সন্তানদের পড়ালেখার পেছনে সময় দিতে পারতেন না। এ কারণে তিনি নিজেই সন্তানদের লেখাপড়ার দেখভাল করা সহ সংসার পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব বহন করতেন। দিনে সময় না পেলেও রাতে সন্তানরা যখন পড়ালেখা করতো তখন তিনি রাত জেগে সন্তানদের পাশে বসে থাকতেন, একই সাথে সব সময় সন্তানদের উৎসাহ দিতেন। যত কষ্টই হোক কঠোর পরিশ্রম এবং সংগ্রামের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে হবে, একই সাথে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে হবে। এরপর তার বড় ছেলে আরিফ-উজ জামান স্থানীয় টাউনশ্রীপুর শরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এস.এস.সি, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় এবং ছোট ছেলে আখতার উজ্জামান ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে পড়াশোনা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ইটঊঞ) এ চান্স পেয়ে যায়। তৃতীয় সন্তান অর্থাৎ তার একমাত্র কন্যা তামান্না নাসরিন উর্মি খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। ফরিদা হক আরো জানান, বড় ছেলে মাস্টার্স পাশ করার পর পরই ২৪ তম বি.সি.এস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে যোগদান করেন, পরবতীর্তে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হন। এরপর ২৭ তম বি.সি.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকুরী পান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি যশোর জেলা পরিষদের প্রধান কার্যনির্বাহক (সিইও)পদে কর্মরত আছেন। বড় ছেলের স্ত্রীও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াতে বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে বুয়েট থেকে পাশ করার পর সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার পদে, সেফালো বাংলাদেশ লিঃ, ঢাকাতে কর্মরত। ছোট ছেলের স্ত্রীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। তৃতীয় সন্তান অর্থাৎ তার একমাত্র কন্যাও ৩০ তম বি.সি.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকুরী পান, ভূমি জরিপ চার্জ অফিসার হিসেবে (উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদ মর্যাদা), রাজশাহী জোনে কর্মরত আছেন। তার স্বামী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে নাটোর জেলায় কর্মরত আছেন। জীবনযুদ্ধে জয় করে সফল জননী ‘জয়িতা’ সম্মাননা অর্জন বিষয়ে ফরিদা হক আরো বলেন, আমার সন্তানদের জন্য আমি ও আমার পরিবার গর্বিত। আমার সন্তানরা স্ব স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত আজ। এর পেছনে আমার পাশাপাশি আমার স্বামীরও অনেক অবদান আছে। জীবনযুদ্ধের কঠিন সময়ে ফরিদা হকের দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর কর্মের ফলে আজ তার সন্তানদের এ অবস্থান। ফরিদা হকের এ সম্মাননায় তার সন্তানরাও গর্বিত।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী সাজু পারভীন। সে সখিপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের কন্যা। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় ৮ম শ্রেণির পর পিতামাতা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ে হলেও সে সুখে শান্তিতে শ্বশুরবাড়ি ঘর সংসার করতে পারিনি। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ীর লোকদের দ্বারা অনেক ভাবে নির্যাতিত হতে থাকে সে। পিতা দরিদ্র বলে সংসার করার জন্য কাউকে কিছু না বলে স্বামীর বাড়িতে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করে সাজু। ততদিনে তার কোলে আসে ২ টি সন্তান। কিন্তু তার উপর নির্যাতনের মাত্রা দিনে দিনে বাড়তেই থাকে। পরে তার ভাই ও মা তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসে। এরপর সে হাসপাতালে ভর্তি হই এবং চিকিৎসা শেষে খানিকটা সুস্থ হই। তারপর থেকে সে তার বাপের বাড়িতে অবস্থান করে। সাজু পারভীন আরো জানান, আমাকে তালাক না দিয়ে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় আমার ও আমার সন্তানদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসার চালাতে অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নেই আমাকে কোন কিছু করতে হবে। তাই আমি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে কাপড় বিক্রি করতাম। পরবতীর্তে আমি একটা ভ্যান ক্রয় করি এবং একজন লোক নিয়োগ করে ভ্যানে করে কাপড় বিক্রয় শুরু করি। তার কয়েক বছর পর আমি দেবহাটা উপজেলার সখিপুর মোড়ে প্রথমে একটা দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। পরবতীর্তে আরও একটি দোকান নিয়ে জুতা, কসমেটিক্স এবং প্লাস্টিক সামগ্রী এর ব্যবসা শুরু করি। আমার দুটো দোকানের ব্যবসা খুবই ভালোভাবে চলছে। বর্তমানে আমি অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছি। আমার দেখাদেখি গ্রামের অনেকেই এ ব্যবসা শুরু করেছে। প্রথম সন্তান মেয়েটি বর্তমানে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছেলেটি ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। আমি নিজে পড়ালেখার সুযোগ না পেলেও আমার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা লাভের পথের সব বাঁধা আমি দুর করতে চাই। আমার সংসারে উন্নয়নের জন্য সমাজে আমার গ্রহণ যোগ্যতা বেড়েছে। এছাড়াও বর্তমানে আমি আনসার ও ভি.ডি.পির উপজেলা মহিলা কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন কারিমুন নেছা নামের আরও এক নারী। তিনি সখিপুর গ্রামের ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক মৃত লুৎফর রহমান সরদারের স্ত্রী। তিনি ১৯৫৯ সালে এস.এস.সি পাশ করেন এবং একই বছরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর ১৯৬০ সালে পরিবার পরিকল্পনার কাজ শুরু করেন, তখন থেকে শুরু হয় তার সমাজের মানুষকে নিয়ে কাজ করা। তার স্বামীর সাথে তখনকার বিভিন্ন নামকরা লোকেদের উঠা বসা ছিল, তারা বিভিন্ন সময় তাদের বাসায় আসত। তারমধ্যে কমরেড মনি সিং, জ্যোতি বসু (মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ) তাদের সান্নিধ্যে থেকে, তাদের খেদমতও করেছেন তিনি। কারিমুন নেছা আরো বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে খালিশপুর, খুলনা থেকে ৩ সন্তানকে নিয়ে পায়ে হেঁটে দেবহাটার সখিপুরে চলে আসি। এরপর ভারতের টাকিতে যখন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প শুরু হয় তখন আমি বহু মুক্তিযোদ্ধাকে রান্না করে খাওয়ানো সহ সার্বিক সহযোগিতা করেছি। মুক্তিযুদ্ধ পরবতীর্কালে আমি অসহায় ও দরিদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো সহ সার্বিক সহযোগিতা করেছি। ৪০ জন গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার খরচ সহ সার্বিক সহযোগিতা করেছি। তারমধ্যে ৫ জন ডাক্তার, ৩ জন ইঞ্জিনিয়ার, কয়েক জন প্রফেসর এবং কয়েক জন বিভিন্ন জায়গায় সরকারি চাকুরি করছে। বর্তমানেও একজন মেধাবী ছাত্রকে পড়ালেখার খরচ সহ সার্বিক সহযোগিতা করছি। এছাড়া ১০ জন অসহায় গরীব ব্যক্তিকে বসতঘর বানিয়ে দিয়েছি। ৫০ টিরও বেশী ভ্যান গরীব অসহায় ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করেছি। আমার পরিবারও সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত আছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সমাজ উন্নয়নে নিয়োজিত রাখবো নিজেকে ।
শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী রোজি সুলতানা। তিনি দেবহাটা সদরের সামসুজ্জামান খানের স্ত্রী। তিনি সাতক্ষীরা জেলার নেবাখালী গ্রামে ১৯৭৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহন করেন। তার আমার পিতা মাতার অনুপ্রেরণা আর তাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ছাত্রজীবনে কঠোর পরিশ্রম আর সাধনা করে যশোর বোর্ডের অধীন বাবুলিয়া জে.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতক্ষীরা হতে ১৯৮৯ সালে এস.এস.সি ২য় বিভাগে পাশ করি। ১৯৯১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজ হতে এইচ.এস.সি ১ম বিভাগে পাশ করি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমি বড় সন্তান। ১৯৯২ সালে পিতা সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং দীর্ঘ নয় মাস অসুস্থ অবস্থায় থাকার পর তিনি মারা যান। এরপর মাতাÍপিতার স্বপ্ন পূরণ আর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ও স্বাবলম্বী করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে সামনে এগিয়ে যায়। ১৯৯২ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বি.এ ভর্তি হওয়ার পরে দেবহাটা উপজেলায় বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে ১৯৯৩ সালে বি.এ পাশ করেন। ২০০৪ সালে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে দেবহাটা সরকারি বি.বি.এম.পি ইনষ্টিটিউশনে যোগদান করি। তারপর চাকুরিরত অবস্থায় ২০০৮ সালে যশোর সরকারি এম.এম কলেজ হতে উচ্চতর বিভাগে এম.এ পাশ করে পরবতীর্তে বি.এড ও এম.এড পাশ সম্পন্ন করি। বর্তমানে আমি সুনামের সহিত দেবহাটা সরকারি বি.বি.এম.পি ইনষ্টিটিউশনে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। এছাড়া দুইটি কন্যা সন্তান আছে। বড় কন্যা বুশরা শিরিন দিশা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে এম.এস.সি, প্রানিবিদ্যা বিভাগে পড়ছেন। আর ছোট কন্যা নাঈমা শিরিন দিপ্তী দেবহাটা সরকারি বি.বি.এম.পি ইনষ্টিটিউশন থেকে ২০২০ সালে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। বর্তমানে সে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়াশোনা করছে। সে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রশাসনের কাছ থেকে ৬০-৭০ টির বেশি পুরস্কার অর্জন করেছে। এ ছাড়াও শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে ২০১৮ সালে ঢাকা থেকে স্বর্ণকিশোরী উপাধী লাভ করেছে।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেছেন নাছিমা বেগম। তিনি দেবহাটার কামরুল ইসলামের কন্যা। তার জীবনে রয়েছে এক দুঃখের সাগর। কেননা বিয়ের পর থেকে স্বামীর বাড়ীতে স্বামী ও শ্বশুড়ি নির্যাতন শুরু হয় তার। যতই দিন যেতে থাকে ততই নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে সে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২০০৭ সালে স্বামীর সাথে তালাক হওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। বাবার বাড়ী আসার পর থেকে মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে নাছিমা। কোন দিশা খুঁজে না পেয়ে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করে সে। যে আয় হয় তাতে তার সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন বিভিন্ন স্থানে কাজের ফাঁকে যেয়ে কাজ খোঁজা শুরু করে নাছিমা। অনেক খোঁজা খুঁজির পর উপজেলায় যোগাযোগ করে সরকারি রাস্তার প্রকল্পের কাজ পায়। এরপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সে নিজেকে তৈরী করতে শুরু করে। কাজ করে যে টাকা আয় হয় সেই টাকা দিয়ে নিজের সংসার চালানো ও মেয়েকে লেখাপড়া চালাতে শুরু করে। মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে যাতে ভালো চাকরি করতে পারে তার জন্য সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যেমে বাবার বাড়িতে সে বর্তমানে আর্থিক ও সামাজিক বিপন্নতা কাটিয়ে উঠেছে। বর্তমানে তার সুখে দিন কাটছে।