রাজনীতির খবর: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। যদিও তাঁর শারীরিক অবস্থা গত ২৪ ঘণ্টা ধরে স্থিতিশীল আছে। তবে লিভার সিরোসিসের কারণে যেকোনো সময় রক্তক্ষরণের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। আর এজন্য যত দ্রুত সম্ভব সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশের কথাও জানান তাঁরা।
আজ রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসার সামনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী এসব তথ্য তুলে ধরেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা যারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সরাসরি জড়িত তাঁরা দেখলাম, মানুষের মাঝে এ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। ম্যাডামের কী অবস্থা সে বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই। তাই, আমরা আপনাদের মাধ্যমে সেটি জানাতে এসেছি।’
চিকিৎসক বলেন, ‘গত ১২ নভেম্বর আমরা প্রথম জানতে পারি, হঠাৎ তিনি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এমন অবস্থা হয়েছে যে, একটু হাঁটতে গিয়ে তিনি হাঁপিয়ে উঠছেন। আমি এবং ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসে রাত ২টার পর পরীক্ষা করাই। সকালে দেখতে পাই যে, উনার শরীরের হিমোগ্লোবিন কমে গেছে। তাই, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই।’
‘মূলত উনার (খালেদা জিয়া) লিভারের যে সমস্যা সেটি মাথায় রেখেই উনাকে ভর্তি করাই। এবং রাত ৯টার দিকে উনার ম্যাসিভ রক্তবমি হয়। উনাকে দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয় এবং দ্রুত এন্ডোস্কপি করে ব্লিডিংয়ের কারণ জানতে চেষ্টা করি। কিন্তু উনার ব্লাডপ্রেসার বেশি থাকায় সম্ভব হয়নি। পরে রাত ৩টার দিকে প্রফেসর আরেফিনকে খবর দেই এবং খালেদা জিয়ার এন্ডোস্কপি করি এবং উনার চিকিৎসা শুরু করি।’
এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘তখন দেখতে পাই, খালেদা জিয়ার সিরোসিস অফ লিভার৷ তথা লিভার তাঁর কাজ করতে পারছিল না। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে উনার ব্লিডিংটা বন্ধ করি। কারণ উনি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের রোগী৷ এবং নতুন কিছু মেডিসিন দেই।’
চিকিৎসক আরও বলেন, ‘১৭ নভেম্বর ম্যাডামের খাদ্যনালী দিয়ে ব্লিডিং শুরু হয়। তখন আমরা আবার হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করি। ১৩ তারিখ রাতে উনার হিমোগ্লোবিন ৫.৪ এ চলে আসে। ১৭ তারিখ আবার তা কমে আসে। কিন্তু উনাকে আবার এন্ডোস্কপি করলে বিপদ হতে পারে…। আবার ২১ তারিখ মনে হয় যে উনার ব্লিডিং বন্ধ হয়।’
এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘ভয়ের কথা হলো, ২৩ তারিখ থেকে উনার ফের ব্লিডিং শুরু হয়। ২৪ তারিখ উনার এত বেশি ব্লাড যাওয়া শুরু হলো যে, তা কালার পরিবর্তন করারও সুযোগ পাচ্ছিল না। এবং কালো, আবার ফ্রেশ ব্লাড যাওয়া শুরু হলো। তখন আমরা আবার প্রফেসর আরেফিনকে ডাকি। এবং রাতে আবার জেনারেল ওটিতে নিয়ে উনাকে এন্ডোস্কপি ও ব্লাড ট্রান্সমিশন করি। তখন মনে হলো আরেকটু নিচ থেকে হচ্ছে। কারণ উপর থেকে হলে রক্তবমিটা উপর দিয়ে হতো। আমরা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না যে, উনার পুরা ক্লোন রক্ত জমাট বেঁধে আছে। এবং এটা ক্লিন করে করে উপরে গিয়েছে। কিন্তু উনার তৃতীয় ব্লিডিংয়ের সোর্স পর্যন্ত যাওয়া যায় না। আবার উনাকে সেই লাইফ সেভিং ইনজেকশন দিয়েছি। কোনো উপায় না পেয়ে। লাস্ট ২৪ ঘণ্টায় উনার কোনো ব্লিডিং হয়নি।’
চিকিৎসক আরও বলেন, ‘উনার এখন সব শেষ যা চিকিৎসা সেটি হাতেগোনা কয়েকটি অ্যাডভান্স সেন্টারে আছে। বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত কোথাও নেই।’
এই চিকিৎসকদের দাবি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতেই সম্ভব।