শিক্ষা ডেস্ক: এ বছরে মাধ্যমিকের নতুন বইয়ে ৩০টির বেশি ভুল ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে শুরু করে সংবিধান নিয়েও ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে এসব বইয়ে। সমালোচকরা বলছেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
গত বছর পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধনে হস্তক্ষেপ করতে হয় হাইকোর্টকে। তখন এনসিটিবি জানায়, আগামীতে এমন ভুল আর হবে না। সেসময় ভুল না হওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও। তবে ২০২২ সালে বিতরণ করা নতুন বইয়ে অন্তত ৩০টির বেশি ভুল খুঁজে বের করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪।
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ের ১০ম পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে বাঙালি। আসলে হবে, ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে।
সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের ১৪ পৃষ্ঠায় ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের যে ছবি দেয়া হয়েছে সেটি ওই রাতের নয়।
৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা বইয়ের ১৯৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহিদদের স্মৃতি চির জাগরুক রাখতে, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ স্থাপিত হয় শিখা চিরন্তন। কিন্তু সঠিক তথ্য হলো ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের স্থান ও ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানকে জাগরুক রাখতেই শিখা চিরন্তন স্থাপিত হয়।
অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের ২০ পৃষ্ঠার বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও পদাধিকার বলে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। কিন্তু পদাধিকার বলে নয়; স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ীই তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন।
৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের ২৮তম পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে, জেনারেল এরশাদের ৭ম সংশোধনী ও ত্রয়োদশ সংশোধনী সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করেছে। অথচ ত্রয়োদশ সংশোধনী হয় খালেদা জিয়ার আমলে। একই বইয়ের ১২ পৃষ্ঠায় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের সময় দেয়া ২০০৮ সালে। অথচ এটি হবে ২০০৯ সালে। এছাড়া ২০৬ পৃষ্ঠায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে মহিলা আসনসহ আওয়ামী লীগের আসন দেখানো হয়েছে ৩০৬টি। আসলে হবে ৩০৮টি।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো অষ্টম শ্রেণির সৃজনশীল বইয়ের ১২৮ পৃষ্ঠায় দেখানো হয়েছে দোয়েল পাখি বাসা বেঁধেছে জবা গাছে। অথচ দোয়েল কখনই জবা গাছে বাসা বাঁধে না।
এ বিষয়ে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেছেন, তারা এখনও সব ভুল বের করতে পারেননি। এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করবেন।