শীতের ভোরে কুয়াশার চাদর মোড়ানো সকালে মাঠ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে হলুদের সমারোহ। জেলার মাঠ দখলে নিয়েছে সরিষা। আর তাই কুয়াশায় ভেজা হলুদ ফুল দুলছে মাঠে মাঠে। শীতের রাতে কুয়াশায় ভেজা শরিষার গাছ রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। সব মিলে সৃষ্টি হয়েছে মনোরম পরিবেশ। বেলা বাড়তেই কুয়াশার জল রৌদ্রে পালিয়া যায়। আর এই গাছ থেকে শত শত মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে ফেরে আপন নীড়ে। সেই সাথে রাস্তার পাশের শরিষার মাঠে ছবি তুলছেন অনেকে।সাতক্ষীরার প্রায় প্রতিটি মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সমারোহ। তবে সরিষা চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় এচাষে ঝুঁকে পড়েছেন এ জেলার কৃষকরা। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও সংশয় কাটছে কৃষকদের। কারন অসময়ের বৃষ্টিতে কিছুটা উৎপাদন ঘাট্টি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু ভালো ফলনের আশায় জেলার কৃষকরা রাতদিন পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকের পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তারাও মাঠে মাঠে ছুটে চলেছেন।এদিকে চলতি রবিশস্য মৌসুমে অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিতে উৎপাদন নিয়ে সংসয় রয়েছে। তবে উৎপাদিত ফসলে কৃষক ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন বলছেন কর্মকর্তারা। তবে মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক জমি ডুবে যায় আবার কোন কোন জমিতে এখনো পানির আর্দ্রতা কমেনি। যার কারনে পরিমিত ফলন না হওয়ার কথা বলছেন কৃষক।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলায় ১২৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি ১.২ মেট্রিক টন উৎপাদনের সম্ভবনা করা হচ্ছে। আবাদ হওয়া সরিষার মধ্যে টরি-৭, বারি সরিষা-১৪ ও ১৫, বারি সরিষা-১৭, বিনা সরিষা- ৯ জাতের সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে।
এদিকে সরিষা চাষি জামাল উদ্দীন জানান, এবছর আমি ৬ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় ফলন কম হওয়ার আশংঙ্কা করছি। তবে সরিষা চাষ শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় একটু চিন্তায় আছি। তবে চলতি মৌসুমে সরিষা ফলন কম হওয়ায় এবছর দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
সরিষা চাষি সৈয়দ আলী জানান, সরিষা চাষের শুরুতে জমিতে ঠিকমত জো করতে পারিনি। বীজ রোপনের পর অতি বৃষ্টিতে চারা ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারেনি। তবে যা ফলন হয়েছে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ঠিক থাকলে খরচ কাটিয়ে উঠতে পারবো। তিনি আরো জানান, বীজ রোপন থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত কৃষি অফিসারগন বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। যে কারনে কিছুটা হলেও মানসিক ভাবে স্বাভাবিক আছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম জানান, মৌসুম শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় সরিষার ফলন একটু ব্যহত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে এবছর সরিষা চাষের বিগত বছরের মত উৎপাদন না হলেও উৎপাদিত ফলন থেকে কৃষক বাড়তি মুনাফা পাবে বলেও আশা করছি। তবে বিগত বছরের তুলনায় সরিষার দাম বাড়তে পারে।