নিজস্ব প্রতিনিধি:
আইনজীবী সমিতির দেয়া বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরার সদ্য সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান বলেছেন, আমি সর্বদা চেষ্টা করেছি সত্যের পথে থেকে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে। আইনজীবী, বিচারক ও বিচাপ্রার্থী মানুষ সকলকে নিয়ে চলার চেষ্টা করলেও সব থেকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছি বিচারপ্রার্থী মানুষকে। চেষ্টা করেছি ন্যায় ও সত্যের পথে থাকার জন্য। তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ থাকতে পারে, তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সম্পর্ক একটি শক্তি, আপনাদের সাথে আমার যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা অটুট থাকবে। তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ফুলের মধ্যে গোলাপ যেমন শ্রেষ্ঠ, তেমনি সরকারী সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিচার বিভাগও একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, আর আপনারা সেই প্রতিষ্টানের কর্মকর্তা (কোর্ট অফিসার), সেজন্য আপনারা এমন কিছু করবেননা যাতে করে বিচার বিভাগের সুনাম ক্ষুন্ন হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আইনজীবী সমিতির হল রুমে বার পরিচালনা পরিষদের আহবায়ক ও জিপি এড. শম্ভুনাথ সিংহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সংবর্ধনা সভায় সংবর্ধিত ব্যক্তি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বিশ্বনাথ মন্ডল, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: হুমায়ূন কবীর, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো: ফারুক ইকবাল ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার। এছাড়া বক্তব্য রাখেন, এড. আরিফুজ্জামান আলো, এড. সাইদুজ্জামান জিকো, এড. সৈয়দ জিয়াউর রহমান, এড. জহুরুল হায়দার বাবু, এড. এম শাহ আলম, এড. মো: আব্দুল মজিদ ও পিপি এড. আব্দুল লতিফ। এ সময় বিচার বিভাগ, সাতক্ষীরার সকল পর্যায়ের বিচারকবৃন্দ, আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীগণ উপস্থিত ছিলেন। বক্তাগন সদ্য সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন হতে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনে যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত হওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ জানান এবং আদালত চত্ত্বরে চলাচলের রাস্তা তৈরীতে সহযোগিতা করা, বিচাপ্রার্থীদের বসার জন্য স্থান নির্মাণ করা সহ অসহায় গরীব মানুষের আইনি সেবা পাওয়ার জন্য লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে জেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষেত্রে তাঁর আন্তরিকতার প্রশংসা করেন।
বিদায়ী অতিথি শেখ মফিজুর রহমান তাঁর আবেগঘন বক্তবে উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি সম্পর্কের সেতু নির্মাণ করতে চাই, দেওয়াল নয়। তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, এ দেশের প্রতি আমাদের অনেক ঋণ রয়েছে, আমাদের কাজ করতে হবে, কিছু কাজ যদি আমরা করতে পারি সেটিই দেশের জন্য আমাদের ঋণ শোধ হবে। তিনি বিচার বিভাগকে অন্ধকারের আলো হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, যতদিন জীবন আছে বিচার বিভাগের সাথে থেকে আমি কাজ করবো। তিনি আরো বলেন, আমরা ভাবি জীবন মানে জীবিকা কিন্তু জীবীকার চেয়ে জীবন অনেক বড়। তিনি সকলকে কু-সংস্কর থেকে সরে এসে ভালো কাজের সাথে যুক্ত থাকার আহবান জানান।
সভার শুরুতে প্রধান অতিথি সংবর্ধিত ব্যক্তি সাতক্ষীরার সদ্য সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানকে সম্মাননা পদক উপহার দেন।
সংবর্ধনা সভার এক পর্যায়ে প্রজেক্টর মেশিনের মাধ্যমে ডিজিটাল সিস্টেমে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের সামগ্রীক কর্মকান্ডের উপর একটি প্রামান্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়। এ সময় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে এক অন্যরকম ভালো লাগার পরিবেশ তৈরী হয়। সকলে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এর কর্মময় জীবনের অতি মানবিক দিকগুলো পর্দায় দেখতে পেয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার ও অতিরিক্ত পিপি এড. অনিত মুখার্জী।