নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গাছ থেকে আম পেড়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় এক ব্যবসায়ির রান্না ঘর, কাঠঘর ও গোয়ালঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের মাছিয়াড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মাছিয়াড়া গ্রামের মৃত রঞ্জন কুমার ঘোষের ছেলে ব্যবসায়ি সুমন ঘোষ জানান, একই গ্রামের কালিকৃষ্ণ ঘোষের ছেলে সুখেন্দু ঘোষের কাছ থেকে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ২০৯৫ দাগের ২০ শতক বাস্তু জমি কেনেন। ওই জমিতে মাটি ভরাট করে তিন দিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে গাছগাছালি লাগিয়ে নামপত্তন ও খাজনা দিয়ে তিনি শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে রয়েছেন।
কালিকৃষ্ণ ঘোষ ২০৯৫ দাগের সাড়ে ১৯ শতক জমিসহ আরো কয়েকটি দাগের জমি বায়নাপত্র করে দিলেও দলিল করে না দেওয়ায় রামকৃষ্ণ ঘোষ ওই জমি ১৯৮৮ সালে আদালতের মাধ্যমে লিখে নেন। রামকৃষ্ণ ঘোষ মারা যাওয়ার পর তার দুই ছেলে বাসুদেব ঘোষ ও শ্যাম সুন্দর ঘোষ ২০৯৫ দাগে ৫ শতক জমি রেকর্ড পেয়ে তার(সুমন) জমির মধ্য থেকে সাড়ে সাত শতক জমি সাত মাস আগে দাবি করা শুরু করে। একপর্যায়ে তিনি ওই জমির এক পাশে বাকি থাকা সীমানা পিলার বসিয়ে ঘেরা দিতে গেলে বাসুদেব ও শ্যামসুন্দর বাধা দেয়। এ ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এ নিয়ে থানায় বসাবসি করে সিদ্ধান্ত না হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বিষয়টি নিয়ে বসাবসি করেন। দলিলের নকশা অনুযায়ি তিনি (সুমন) জমি ভোগ করছেন কিনা তা জানতে দাতা সুখেন্দু ঘোষকে ডাকার কথা হলে প্রতিপক্ষরা মানতে রাজি হয়নি।
সুমন ঘোষ অভিযোগ করে বলেন,
সাতক্ষীরা শহরের বুশরা হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন তার ভাগ্নিকে মঙ্গলবার দুপুরে দেখতে যান তার মা কল্পনা ঘোষ। বিকেলে মা বাড়ি ফিরে জানতে পারেন যে বাসুদেব ঘোষ ও শ্যামসুন্দর ঘোষসহ কয়েকজন তাদের গাছ থেকে আনুমানিক তিন মণ আম পেড়ে নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের রান্না ঘর, কাঠঘর ও গোয়ালঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় বাসুদেব ও শ্যামসুন্দর। প্রতিবেশি জয়ন্ত ঘোষের বাড়িতে কালিপুজা দেখতে আসা লোকজন ছুঁটে এসে ওই আগুন নিভিয়ে ফেলে।
খবর পেয়ে খলিলনগর পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে মাছিয়াড়া গ্রামে গেলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, বাসুদেব ঘোষ এক সময় পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পার্টির মধ্যে আভ্যন্তরীন কোন্দলকে ঘিরে তার এক পা পিটিয়ে ভেঙে দেয় সহকর্মীরা। এরপরও সে ছিল বেপরোয়া। অরবিন্দ ঘোষ, সুকুমার ঘোষ ও জয়ন্ত ঘোষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে মামলা রয়েছে বাসুদেব ও শ্যামসুন্দরের বিরুদ্ধে। আদালতে বারবার হেরে গেলেও আপিল করে জমির দখল ফিরিয়ে দেয়নি বাসু ও শ্যাম। একইভাবে একজন বড় মাপের জনপ্রতিনিধি তাদের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে সুমন ঘোষের ন্যয্য জমির কিঠু অংশ গায়ের জোরে দখল করে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার আম পেড়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় রাতে সুমনের তিনটি ঘরে আগুন দেওয়ার পর সীমানা পিলার তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাসুদেব ঘোষ তার বিরুদ্ধে আম পাড়া ও ঘরে আগুন দেওয়াসহ অনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, তার বাবার আমল থেকেই দলিল মূলে তারা ওই জমির একাংশের মালিক। সুমন ঘোষ গায়ের জোরে তারে ন্যয্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ মোঃ ফকরুল আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, গাছ থেকে আম পেড়ে নিয়ে যাওয়া ও ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সুমন ঘোষ বাদি হয়ে বুধবার দুপুরে বাসুদেব ঘোষ ও শ্যামসুন্দর ঘোষসহ অজ্ঞাতনামা চার জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।