প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
২০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে বাড়ি থেকে তুলে এনে ১৭ দিন গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে রেখে ষাড়াশি দিয়ে পায়ের নখ তুলে হাত, পা ও চোখ বেঁধে, লাঠি ও গুলি করে হাতের কনুই ও কবজির হাড় ভেঙে দিয়ে ১৩ লাখ টাকা আদায় করার ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মুগিডাঙা গ্রামের ওয়াজেদ আলী সরদারের ছেলে এরশাদ আলী ওরফে আলী হোসেন বাদি হয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে সদর সার্কেলের তৎকালিন সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানসহ ১৭জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ জনের নামে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্যতম আসামীরা হলেন, সদর থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন, ডিবি পুলিশের তৎকালিন উপপরিদর্শক আবুল কাশেম, সহকারি উপপরিদর্শক কাজী এমরান, সদর থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম, সহকারি উপপরিদর্শক পাইক দেলোয়ার হোসেনসহ মৃগিডাঙা গ্রামের ১১জন।
মামলার বিবরনে জানা যায়, সদর উপজেলার মৃগিডাঙা গ্রামের ওয়াজেদ আলী সরদারের ছেলে এরশাদ আলী ওরফে আলী হোসেন একজন মুদি ব্যবসায়ি। তার মাছের ঘের ও রয়েছে। ২০১৩ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে পুলিশসহ সকল আসামীরা তার কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ওই বছরের ১১ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে মিস্ত্রী দিয়ে কাজ করানোর সময় একই গ্রামের আলী হোসেন, নুরুল আমিন, মিজানুর রহমানসহ ১১ জন তার বাড়ি ঘিরে ফেলে। তখন স্থানীয় সকল আসামীদের সহযোগতায় পুলিশ তার দুই হাতে হ্যাÐকাপ লাগাইয়া ভ্যানে তুলে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে একটি অন্ধকার রুমে আটকে রাখে।
স্বজনরা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গেলে তারা কিছুই জানেন না বলে জানানো হয়। গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে উপপরিদর্শক আবুল কাশেম ব্যবসায়ি এরশাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চায়। আট দিন ধরে নির্যাতনের পর তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে টাকা আনার কথা বলতে বলে। ২৪ মার্চ রাত ৮টার দিকে উপপরিদর্শক আবুল কাশেম বাঁশের লাঠি দিয়ে নির্যাতনের একপর্যায়ে তার ডান হাতের কনুই এর হাড় ভেঙে গুড়ো করে দেয়। প্লাস দিয়ে তুলে নেওয়া হয় শাহাদাৎ আঙুলের নখ। এরপরও টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে ২৫ মার্চ ভোরে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজত থেকে তার দু’চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে একটি অজ্ঞাতস্থানে এনে পস্তিল দিয়ে গুলি করে তার ডান হাতের কব্জির হাড় ভেঙে দেওয়া হয়।
এরপর কয়েকজন আসামী তার স্ত্রীকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে এসে করুণ পরিণতি দেখায়। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ১৩ লাখ টাকা দিলে ২৮ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ২২ দিন এরশাদ আলী সাতক্ষীরা শহরের সংগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. ইকবাল হাসান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।