নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে রাজু বাহিনীর ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। “আশাশুনির শ্রীউলায় ১৮ পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়িয়েও ক্ষ্যান্ত হয়নি কে এই রাজু?! শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের জেরে এবার সেই সাংবাদিক পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে রাজু বাহিনীর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে আশাশুনি উপজেলার গাজীপুর কুড়িগ্রাম এলাকায় এই নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীপুর কুড়িগ্রাম মাদ্রাসার বাৎসরিক মাহফিলে যান সাংবাদিক এসএম বিপ্লব হোসেনের ছোট ভাই দীন ইসলাম। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া রাজু বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তার ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে তারা দীন ইসলামকে হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক পেটায়, এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
হামলায় নেতৃত্ব দেয় রাজু বাহিনীর সদস্য শ্রীউলা গ্রামের মুজাহিদুল ইসলাম, সাথে ছিল মৃত মহিবুদ্দিন সরদারের ছেলে নাজুম, মৃত সালাম সদরের ছেলে মহসিন, ফারুক সরদারের ছেলে তৈবুর, মজনু সরদারের ছেলে অকিতসহ আরও অনেকে। খবর পেয়ে স্থানীয় যুবক শাকিব হোসেন ঠেকাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো পদ-পদবী ছাড়াই বিএনপি ও যুবদলের নাম ভাঙিয়ে রাজু বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। এর আগে, গত ১৫ জানুয়ারি এই বাহিনীর সদস্যরা সাংবাদিক বিপ্লবের ভাইয়ের উপর প্রথমবারের মতো হামলা করে। স্থানীয়দের সহায়তায় সেসময় রক্ষা পায়। বিগত আগস্টের ৬ তারিখে রাজুর নের্তৃত্বে রাজুসহ তার বাহিনী মিলে আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং সর্বস্ব লুট করে। ওই ঘটনার পর দৈনিক মানবজমিন, পত্রদূত, ঢাকা টাইমস, স্বদেশ প্রতিদিন, দি এডিটরসসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে রাজু বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালায়। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত রাজু বাহিনীর সদস্যরা পলাতক রয়েছে।
এদিকে, সাংবাদিক মহল ও স্থানীয়রা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও রাজু বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে আহত দীন ইসলাম ও শাকিব হোসেন স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রাজু বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় ও সেনাবাহিনী ক্যাম্পে অসংখ্য অভিযোগ জমা হয়েছে। এছাড়াও, ২টি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি রাজু বাহিনীর প্রধান শামীম রেজা রাজু।
উপজেলা যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি ও শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতকাল রাতে সাংবাদিক বিপ্লবের ভাই দীন ইসলামসহ বকচর গ্রামের আরো কয়েজনের উপর সন্ত্রাসী রাজু বাহিনীর লোকজন অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা করে এবং হাতুড়ি, রড এবং চেইন দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এই শামীম রেজা রাজু আমার দলের পদ পদবীতে কোনদিন ছিল না এবং নেই। এই রাজু তার বাহিনী নিয়ে ইউনিয়নের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনই বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আল আমিন ইসলাম বলেন,”শামীম রেজা রাজু ও তার বাহিনী ৫ তারিখ পরবর্তী সময়ে শ্রীউলা ইউনিয়নের ঘরবাড়ি পোড়ানো, ঘের দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, মারধর, সন্ত্রাসী হামলা—এমন কোনো বেআইনি কাজ নেই যা তারা করেনি। সে কখনো ছাত্রদল, যুবদল বা বিএনপির নেতা ছিল না। তবে বর্তমানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, যার দায় জাতীয়তাবাদী দল নেবে না। এখন সে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু কর্মীকে নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে। আমি প্রশাসনের কাছে এই সন্ত্রাসী রাজু বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে আশাশুনি থানার ওসি বলেন,”বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”