নিজস্ব প্রতিনিধি : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তরুণ নেতৃত্বে জনগণকেন্দ্রিক নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের লক্ষ্যে এক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় উন্নয়ন চাহিদা ও জনগণের প্রত্যাশাকে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এ সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, নাগরিক কমিটির সদস্য, এনজিও ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহরের তুফান কনভেনশন সেন্টার (লেকভিউ)-এ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডো’র আয়োজনে ও একশনএইড বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় ‘এফরটি প্রকল্পের আওতায় নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৫: সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপটে স্থানীয় উন্নয়নে চাহিদা নিরূপণ’ শীর্ষক জেলা পর্যায়ের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিডো সাতক্ষীরার প্রধান নির্বাহী শ্যামল কুমার বিশ্বাস। সংলাপে সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপটে স্থানীয় উন্নয়ন ও নাগরিক চাহিদা নিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান হাদি, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ডা. আবুল কালাম বাবলা, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ফরিদা আক্তার বিউটি, শহর জামায়াতের নায়েবে আমির ফকরুল হাসান লাভলুসহ অন্যান্যরা।
প্রধান আলোচক হিসেবে একশনএইড বাংলাদেশ-এর ডেপুটি ম্যানেজার (প্রোগ্রাম অ্যান্ড পার্টনারশিপ) আরিফ সিদ্দিকী বলেন, “বাংলাদেশ বরাবরই তরুণদের ক্ষমতায়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা ও ন্যায্য উন্নয়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংলাপের মাধ্যমে স্থানীয় তরুণদের মতামত জাতীয় পর্যায়ের আলোচনায় যুক্ত হবে।”
সংলাপে সাতক্ষীরা ইয়ুথ হাবের সভাপতি সাকিব হাসান তরুণ নেতৃত্বে প্রস্তুতকৃত ‘স্থানীয় উন্নয়ন চাহিদা নিরূপণ প্রতিবেদন’ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, স্থানীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এফজিডি ও কেআইআই সভার মাধ্যমে জনগণের বাস্তব দাবিগুলো চিহ্নিত করে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের পরামর্শ সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় পর্যায়ে প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহ ছিল—
দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জরুরি সাড়াপ্রদান, নিরাপদ পানীয় জল, দুর্যোগ সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অবকাঠামো, জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা ও অন্তর্ভুক্তি, দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সংহতি, সাইবার নিরাপত্তা, সম্পদ বণ্টন ও জবাবদিহিতা, সর্বজনীন ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা, ন্যায্য ও নবায়নযোগ্য শক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রাস্তাঘাটের সংস্কার, সুন্দরবন কেন্দ্রিক টেকসই ইকোটুরিজম প্রতিষ্ঠা, সুন্দরবনের পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণ, সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, সাতক্ষীরাকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করা, উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ, সীমান্তে মাদক প্রতিরোধে প্রযুক্তি-নির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে উন্নীত করা, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে কার্যকর পৌর প্রশাসন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, সুন্দরবন বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংযোজন, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাপনা, সবুজ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণাগার স্থাপন এবং প্রাণ সায়র খালের দুই ধার সৌন্দর্যবর্ধন ও সংরক্ষণ।
সভা সঞ্চালনা করেন বেতনা যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মাসুদ রানা। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম অফিসার চন্দ্র শেখর হালদার, ইয়ুথ পিয়ার গ্রুপ ফ্যাসিলিটেটর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, নাগরিক কমিটির সদস্য, ব্যবসায়ী ও এনজিও প্রতিনিধিবৃন্দ।
সংলাপে বক্তারা বলেন,“জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তরুণদের চিন্তা, উদ্যোগ ও নেতৃত্বই আগামী দিনের রাজনীতিকে ইতিবাচকভাবে বদলে দেবে।”
সংলাপ শেষে স্থানীয় তরুণদের প্রস্তাবনা ও সুপারিশের ভিত্তিতে “সাতক্ষীরা জেলা উন্নয়ন চাহিদা সনদ” তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ের আলোচনায় প্রেরণ করা হবে।