সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী জোট গড়ে ভোটে জিতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর হঠাৎ করেই গতকাল ইস্তফা দিয়ে ফের ১২ ঘণ্টার মধ্যে সেই বিজেপিকে নিয়েই নতুন সরকার গঠন করলেন নীতিশ কুমার।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি জোটের প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের সমর্থনের পর থেকেই জেডিইউ নেতা নীতিশ কুমারকে নিয়ে নানা আলোচনা ভেসে আসছিল বিহারের রাজনীতিতে। তার মধ্যেই চলে আসে শরিক আরজেডি-প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে ও উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের দুর্নীতি মামলার বিষয়টি। তেজস্বীর পদত্যাগ নিয়ে টানাপড়েন চলছিল কয়েক দিন ধরেই।
তার মধ্যেই গতকাল বুধবার আরজেডি-জেডিইউ-কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ইস্তফা দেন নীতিশ কুমার। রাতেই বিজেপি নেতাদের নিয়ে দেখা করেন রাজ্যপালের সঙ্গে। আর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিহারের রাজধানী পাটনার রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ষষ্ঠবারের মতো শপথ নেন নীতিশ কুমার। এদিন উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিজেপির সুশীল কুমার মোদি। শপথবাক্য পাঠ করান বিহারের রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠি।
শপথ গ্রহণের দুদিনের মধ্যে বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ দিতে হবে নীতিশ কুমারের সরকারকে। বিহারের বিধানসভার আসনসংখ্যা ২৪৩। এর মধ্যে নীতিশের দল জেডিইউ ও বিজেপির ১৩২ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য দরকার ১২২ জন বিধায়কের সমর্থন।
সূত্র জানায়, আরজেডি-প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই আরজেডি ও জেডিইউ জোটের মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত শুরু হয়। তেজস্বী যাদবকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলেন নীতিশ কুমার। তিনি বলেন, দুর্নীতি মামলায় নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণিত করে ফের তেজস্বী যাদব উপমুখ্যমন্ত্রীর পদে বসুন। কিন্তু নীতিশ কুমারের নির্দেশ পালন করেনি আরজেডি।
কয়েক দিনের টানাপড়েন শেষে বুধবার বিকেলে আচমকাই নীতিশ কুমার বিহারের রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় আরজেডি-জেডিইউ-কংগ্রেসের ২০ মাসের জোট। তারপরই বিজেপির সমর্থনে বিহারে নতুন সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি।
লালুপুত্র তেজস্বী যাদব দাবি করেন, দুর্নীতির মিথ্যা মামলায় ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে জড়িয়ে মানহানি করা হয়েছে। আরজেডি দল বিহারের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যপাল প্রথমে তাঁদের সরকার গঠনের জন্য ডাকেননি।
সবকিছু আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা ছিল এবং বিজেপির হাত ধরে সেই পরিকল্পনা নীতিশ কুমারই করে রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তেজস্বী।
এ ঘটনায় আজ সকাল থেকে আরজেডির আন্দোলনে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে বিহার। দুপুর ১২টা থেকে বিহারের প্রতি জেলায় জেলায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে আরজেডি। সকাল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে বিহারের নানা স্থানে অশান্তি শুরু হয়েছে। এদিন সকালেই উত্তর বিহার ও পাটনার সংযোগস্থলে মহাত্মা গান্ধী সেতু অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আরজেডি সমর্থকরা।