এক দিক দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট দুর্ভাগা। ক্রিকেটের সফলতম দলটির সঙ্গে খেলার তেমন সুযোগই হয় না টাইগারদের! ‘ক্রিকেটের সফলতম দল কারা?’ প্রশ্নের উত্তর দিতে বোধহয় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। টেস্ট-ওয়ানডে দুটোতেই সবচেয়ে বেশি জয়, ওয়ানডে বিশ্বকাপে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া সাফল্যে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। অথচ ক্রিকেটের সফলতম দলটির সঙ্গে টাইগারদের খুব কমই খেলার সুযোগ হয়। ২০১৫ সালে নিরাপত্তা না পাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশে আসতে রাজি হয়নি অস্ট্রেলিয়া। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের নতুন সূচি নির্ধারণ হয় এ বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। কিন্তু আবার বিপত্তি! এবার বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের আর্থিক ঝামেলায় সিরিজকে ঘিরে দেখা দেয় অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। শেষ পর্যন্ত সব ঝামেলার অবসান হয়েছে, বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য দারুণ সুসংবাদ।
১৭ বছর আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র চারটি টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে প্রথম দুটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০০৩ সালে। তিন বছর পর দুই টেস্টের সিরিজের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেও খুব বেশি খেলার সুযোগ হয়নি টাইগারদের। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ২০টি ওয়ানডে খেলেছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। দু দলের খেলা টি-টোয়েন্টির সংখ্যাও মাত্র চারটি।
বাংলাদেশের মাটিতে অস্ট্রেলীয়দের একমাত্র টেস্ট সিরিজের স্মৃতি হয়তো এদেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ছিল মহাপরাক্রমশালী দল। পন্টিং-হেইডেন-গিলক্রিস্ট-ওয়ার্নের মতো কিংবদন্তিদের সামনে বাংলাদেশের উড়ে যাওয়ার শঙ্কা করেছিল অনেকে। কিন্তু স্বাগতিকদের লড়াকু ক্রিকেট বরং বিস্মিত করেছিল সবাইকে। বিশেষ করে ফতুল্লায় প্রথম টেস্টের পারফরম্যান্সে।
শাহরিয়ার নাফীসের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪২৭ রান। ১৩৮ রান এসেছিল নাফীসের ব্যাট থেকে। ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও স্বাগতিকদের দারুণ পারফরম্যান্স। মোহাম্মদ রফিকের বাঁহাতি স্পিনে বিভ্রান্ত অতিথিরা অলআউট হয়ে যায় ২৬৯ রানে। ৬২ রানে রফিকের শিকার ছিল পাঁচটি।
অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে ১৫৮ রানের লিড নেওয়ার আনন্দ উবে যেতে সময় লাগেনি অবশ্য। কারণ দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১৪৮ রানে অলআউট হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০৭ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও জ্বলে ওঠেন রফিক। কিন্তু তার চার উইকেট বাংলাদেশকে জয়ের আনন্দে ভাসাতে পারেনি। রিকি পন্টিংয়ের অপরাজিত ১১৮ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস ৩ উইকেটের নাটকীয় জয় উপহার দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে।
জয়ের সুবাস পেয়েও হারের হতাশার জন্যই হয়তো চট্টগ্রামে পরের টেস্টে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। অতিথিরা জিতেছিল ইনিংস ও ৮০ রানের বড় ব্যবধানে। ওই টেস্টে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নেমে জেসন গিলেস্পির অপরাজিত ২০১ রান নিশ্চয়ই আজও পীড়া দেয় টাইগারদের। টেস্ট ক্রিকেটে কোনও ‘নাইটওয়াচম্যানে’র সেটাই যে একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি!
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এরপর আর টেস্ট খেলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। ১১ বছর পর টেস্টে আবার ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল দলের মুখোমুখি টাইগাররা। বাংলাদেশ আর আগের সেই ‘দুর্বল’ দল নেই। বরং গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক সাফল্যে তারা এখন সমীহজাগানো শক্তি। এমনকি স্টিভেন স্মিথের দলকে হোয়াইটওয়াশের হুমকি দিতেও ইতস্তত করে না। অস্ট্রেলিয়াও অবশ্য আগের মতো শক্তিশালী নয় এখন। দুই টেস্টের সিরিজ তাই জমজমাট হওয়ার কথা।
সে হিসেব পরে। অস্ট্রেলিয়া যে আসছে, এটাই সবচেয়ে বড় সুখবর আপাতত। ব্র্যাডম্যানের দেশকে বাংলাদেশে স্বাগতম!