ডেস্ক রিপোর্ট: শিশুর হাতে বেলুন বাঁশী, তরুনির হাতে চুড়ি, খোঁপায় ফুল। বৃদ্ধের কাঁধে গাছের কলম, গৃহিনীর কাঁখে মাটির কলস, কাঠের বাসন। লোকজ সংস্কৃতির বিরল নিদর্শন ইতিহাসখ্যাত সাতক্ষীরার গুড়পুকুর মেলার সেই পুরনো দিন হয়তো আর নেই। তবু গুড়পুকরের মেলা থেকে কেউ ফেরে না খালি হাতে এমন দিনটি হারিয়ে যেতে যেতে আবার কিন্তু সমহিমায় ফিরে এসেছে। বোমা সন্ত্রাস আর ধর্মান্ধ শক্তির দাপটে হারিয়ে যাওয়া বাঙ্গালি সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন সাতক্ষীরার ঐতিহাসিক গুড়পুকুর মেলা জমে উঠেছে আবারও। এবার এ মেলা চলবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। ২০০২ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর মেলাঙ্গণে ভয়াবহ বোমা হামলার কারণে টানা কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সাতক্ষীরায় ২০১১ সাল থেকে ফের শুরু হয় বাঙ্গালির চিরন্তন সংস্কৃতি তিনশ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক গুড়পুকরের মেলা। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ দিনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বকর্মা ও সর্পদেবী মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে শহরের পলাশপোলে গুড়পুকুর পাড়ে বটবৃক্ষতলে বসে গ্রামীণ লোক সংস্কৃতির এই মেলা। সেখান থেকে মেলাঙ্গন ছড়িয়ে পড়ে শহরের নানা স্থানে। গ্রামীণ পরিবারে প্রয়োজনীয় সকল উপচারে ঠাসা এই মেলায় মেলে হাজার হাজার গাছের কলম আর বাঁশ, বেত, কাঠ, লোহা ও মৃত্তিকার তৈরি নানা ব্যবহার্য জিনিসপত্র। চিত্ত বিনোদনের জন্য মেলায় বসে নানা আয়োজন। ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে মেলায় আসে হাজার হাজার নারী পুুরুষ। এবার মেলা বসেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ রাজ্জাক পার্ক জুড়ে। এবারও গুড়পুকুরের মেলা থেকে কেউ আর খালি হাতে ফিরছেন না। প্রতিদিনই লেগে থাকছে ভিড়। বিগত ২০০২ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর মেলা চলাকালে স্টেডিয়ামে আয়োজিত সার্কাস ও শহরের রকসি সিনেমা হলে ভয়াবহ বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল গুড়পুকুরের মেলা। এতে তিন জনের প্রাণহানি ঘটে। পঙ্গুত্ব বরণ করে শতাধিক নারী পুরুষ। এরপর থেকে টানা কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর গত পাঁচ বছর যাবত মেলা ফের বসলেও সেই যৌবন হারিয়ে যায়। তবে এবার সেই মেলার বিস্তৃতি নজর কাড়ার মতো। আনন্দ বিনোদনে সময় কাটিযে দেওয়ার মতো উপচার রয়েছে এখন শহীদ রাজ্জাক পার্ক জুড়ে। এবারও ১৫ দিনের মেয়াদে সাতক্ষীরা শহর জুড়ে বসা গুড়পুকুর মেলার সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। মেলায় রয়েছে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেলায় আসছেন সব বয়সের নারী পুরুষ শিশু। তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেনাকাটা করছেন। বিনোদনের সব সুযোগগুলিও ব্যবহার করছেন তারা। ভিড়ে ঠাসা এ মেলায় দোকানপাট বসেছে অসংখ্য। তারা বলেন বেচাকেনা ভাল হচ্ছে। মেলায় কোনো সন্ত্রাস নেই, চাঁদাবাজি নেই। মেলায় নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘেœ বেচাকেনা করছেন তারা। আর প্রাণভরে লোকজ মেলা উপভোগ করছেন উৎসব প্রিয় বাঙ্গালি।
পূর্ববর্তী পোস্ট