নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার কলারোয়ার বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা কলেজের অধ্যক্ষকে মারপিট করে তার কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা। এতে বাধা দিতে গিয়ে মার খেয়েছেন কলেজের পিয়ন শফিকুল ইসলাম। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে আনেন। শনিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসাবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মেসলেমউদ্দিনকে নিয়োগ না করা পর্যন্ত তাকে কলেজে ঢুকতেও বারণ করে দিয়েছেন তারা। কলেজ অধ্যক্ষ মো. ফারুক হোসেন এ অভিযোগ করেন।
তবে কেড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান হাবিল বলেন, আমি মারধর করিনি। আমি কলেজে যাবার আগে তাকে মারা হয়েছে। তবে আমি তাকে মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম কমান্ডারকে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান না করা পর্যন্ত কলেজে আসতে না করেছি।
অধ্যক্ষ মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমি সকাল সাড়ে ৮ টায় কলেজে গেছি। চেয়ারে বসতে না বসতেই ৭/৮ জন লোক আমার রুমে ঢুকে আমাকে মারপিট করে । তারা আমাকে কিল চড় ঘুষি মারতে মারতে বের করে আনে। আমি মার খেতে খেতে দৌড়ে পালাই। পাশে একটি বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় গ্রহণ করি। এ সময় তারা বলেন, মোসলেম কমান্ডারকে চেয়ারম্যান করবি, তবে কলেজে আসবি। অন্যথায় তোর হাড় ভেঙে দেবো। তিনি বলেন, এই হামলার নেতৃত্ব দেন কেড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান হাবিল। তার সাথে পরিচিতদের মধ্যে ছিলেন ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম ও মহিলা মেম্বরের স্বামী পাঁচপোতা গ্রামের আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, আমার ওপর হামলা হচ্ছে দেখে ছুটে আসে কলেজের পিয়ন শফিকুল ইসলাম। চেয়ারম্যান ও তার সঙ্গীরা তাকেও বেদম মারধর করেছে। তিনি বলেন হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এসেছি। ইউপি চেয়ারম্যানের ইচ্ছা অনুযায়ী কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান না করায় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি কলারোয়া থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আনে।
এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান হাবিল বলেন ‘তালা কলারোয়ার সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোসলেমউদ্দিনকে কলেজ চেয়ারম্যান করতে ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু অধ্যক্ষ তা লুকিয়ে রেখে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টোলাল গাইনকে চেয়ারম্যান করে এনেছেন। এতেই আমরা ক্ষুব্ধ।’
তবে অধ্যক্ষ মো. ফারুক হোসেন জানান, এবারের গভর্নিং বডি তৈরির কাজ শুরু হয় ৪ মে তারিখে। ১৫ মে তারিখে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ মুনসুর আহমেদ এবারের কমিটিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টো লাল গাইনকে চেয়ারম্যান করা পক্ষে একটি ডিও লেটার দেন। ভুট্টো লাল গাইন আগের কমিটিরও চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ জুলাই তারিখে ভুট্টোলাল গাইনকে আবারও চেয়ারম্যান করে কমিটির অনুমোদন দেয়। তিনি জানান এ ঘটনার পর কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন তাকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন ‘২ জুলাই তারিখে সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ একটি ডিও লেটার ইস্যু করেছেন। এতে তিনি কলারোয়ার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোসলেমউদ্দিনের নাম উল্লেখ করেছেন। আপনি তাকে চেয়ারম্যান করুন।’ অধ্যক্ষ তাকে বলেন এ প্রক্রিয়া তো শেষ হয়ে গেছে। এখন কোনো ডিও লেটার এমনিতেই লাগে না। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তাকে চেয়ারম্যান করা হলে তো তিনি একদিনও কলেজে আসতে পারবেন না।
অধ্যক্ষ আরও বলেন বিষয়টি নিয়ে চারদিকে কমবেশি বাদানুবাদ হচ্ছিল। হঠাৎ করেই তারা এসে তাকে মারপিট করে কক্ষ থেকে বের করে দিল। আর বললো, মোসলেম কমান্ডারকে চেয়ারম্যান না করে কলেজে উঠবি না। তিনি বলেন সন্ধ্যার পরও আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন, আমার শ্বশুর মোসলেম কমান্ডারকে কেনো চেয়ারম্যান করলেন না। অধ্যক্ষ তার জবাবে বলেন গভর্নিং বডির ১৪ সদস্যের মধ্যে ১২ জনই ভুট্টো লাল গাইনের পক্ষে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন বলেন, অধ্যক্ষ ফারুক সংসদ সদস্যের দেওয়া ডিও লেটার চেপে রেখে ভুট্টোলাল গাইনকে কলেজের চেয়ারম্যান করায় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে সম্প্রতি প্রতিবাদ সমাবেশ করে। আজ তারা তাকে মারপিট করেছে। তবে চেয়ারম্যান হাবিল ঠেকিয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন বলেন, হামলায় তার পা ও হাতে গুরুতর জখম হয়েছে। তিনি এর প্রতিকার দাবি করেন এবং কলেজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকলের সহায়তা কামনা করেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট