আসাদুজ্জামান : আটকের ২৪ ঘণ্টা পর পুলিশের নির্মম নির্যাতনে এক মাদ্রাসা সুপার সাতক্ষীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার।
তবে পুলিশ বলছে ওই শিক্ষক মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় মারা গেছেন। তাকে নির্যাতন করা হয়নি।
নিহত মওলানা সাঈদুর রহমান (৪৮) কলারোয়ার হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার। তিনি সদর উপজেলা কাথন্ডা গ্রামের দিলদার সরদারের ছেলে। বৃহস্পতিবার রাত ১ টায় সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাকে দুটি নাশকতার মামলায় বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
তার পরিবারের লোকজন বলছেন, “গ্রেফতারের পর মওলানা সাঈদুর রহমানকে কাথন্ডা বাজারে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাকে নির্মমভাবে মারপিট করে পুলিশ। তার অবস্থা খারাপ হতে থাকায় তাকে সেখানকার পল্লী চিকিৎসক আবদুল্লাহর চেম্বারে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ায় পুলিশ। এ সময় তার ভাতিজা মুত্তাসিম বিল্লাহ ৫ হাজার টাকা এনে চাচাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু পুলিশ তার কাছে দাবি করে এক লাখ টাকা। এ টাকা দিতে না পারায় মাদ্রাসা শিক্ষককে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরা থানায়। সেখানেও তাকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করতে থাকে পুলিশ।”
নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম ও ভাতিজা মুত্তাসিমবিল্লাহর অভিযোগ করে বলেন, “শুক্রবার দিনভর পুলিশ হেফাজতে রেখে তার ওপর দফায় দফায় নির্যাতন করা হলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে আদালতে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতা দেখে সাঈদুর রহমানকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ তাকে ফের নিয়ে যায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করার পর বিকাল ৫ টায় মওলানা সাঈদুরকে পুলিশ ফের আদালতে নিয়ে যায়। বিকালে মওলানা সাইদুরকে আদালত সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠায়।”
সাতক্ষীরা কারাগারের জেল সুপার হাফিজুর রহমান জানান, “কারাগারের মধ্যে ওই রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কারা হাসপাতালে। মধ্যরাতে তাকে স্থানান্তর করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা চলছিল।”
সাতক্ষীরা হাসপাতালের আরএমও ডা. ফরহাদ জামিল বলেন, হাসপাতালে আনার পর তার চিকিৎসা চলছিল। ভোরে মারা যান তিনি। লাশের ময়না তদন্ত হবে। তিনি নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক মওলানা সাঈদুরের দেহে নির্যাতনের চিহ্ণ পাওয়া গেছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আমি তাকে গ্রেফতার করলেও নির্যাতন করিনি। তার কাছে ঘুষও চাইনি। আগে থেকেই তিনি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এর পর তার মৃত্যু সম্পর্কে আর কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।”
সাতক্ষীরায় পুলিশের নির্যাতনে মাদ্রাসা সুপার নিহতের অভিযোগ, পুলিশের অস্বীকার
পূর্ববর্তী পোস্ট