মীর খায়ারুল আলম: ভারত-বাংলা দুদেশের সীমানা জুড়ে বয়ে চলেছে ইছামতি নদী। প্রতিবছর হিন্দু ধর্মীয় বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের মধ্যে বিজয়া দশমির বিসর্জন মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নানান জটিলতায় ৪ বারের মত এবারও বন্ধ হল দুদেশের মিলন মেলা। দুই বাংলার মিলন মেলার ভেলা না ভাসলোও নিজ নিজ সীমারেখায় ভাসবে আনন্দের ভেলা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা বিসর্জনাস্থল দেবহাটার ইছামতি নদী। দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। এই বিসর্জন কে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় মিলন মেলা। প্রতি বছরের এই দিনে ইছামতি নদীর তীরে আন্তর্জাতিক সীমারেখাসহ দ্বিধা-দ্বন্দ ভুলে মিলন মেলায় মিলিত হয় পাশাপাশি অবস্থিত প্রতিবেশী দু’দেশের হাজার হাজার মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে এবং যাতে করে উভয় দেশের মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে পারাপারসহ জঙ্গী সদস্যরা, সন্ত্রাসী, পলাতক আসামী, দুষ্কৃতিকারীরা যাতে করে অবৈধভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে না যেতে পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তারই পরিপেক্ষিতে দু’দেশের জাতীয় ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠিন সিদ্ধান্তে ৪ বারের মত বন্ধ হল ঐতিহ্যবাহী এই মিলন মেলা। দিনটিতে নিরাপত্তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণী ইছামতি নদীর বিস্তৃত জিরো পয়েন্ট এলাকা জুড়ে নৌযানে টহল জোরদার করে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা। এবছর ধরে মোট ৪র্থ বারের ন্যায় সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তের ইছামতি নদীতে শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে মিলন মেলার তরী না ভাসলেও নিজ নিজ সীমারেখার মধ্যে লিখিত অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই আনান্দ ভোগ করতে হবে বলে ইতোমধ্যেই পূজা উদযাপন কমিটির সভায় নীলডুমুর ১৭ বডার গার্ড ব্যটেলিয়ন (বিজিবি)’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে আর কখনো দু’বাংলার মিলন মেলার তরী ভাসবে কি না এমন কোন আশা দেখছেন না স্থানীয়রা। তাছাড়া এদিনে, দায়িত্বরত অবস্থায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ পথ সহ সকল সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দায়িত্বরত থাকবে বলে জানিয়েছেন দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মামুন-উর রশিদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেবহাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পূজা মণ্ডপ থেকে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিয়ে ইছামতি নদীর এই বিসর্জনাস্থলে আসতে যাতে ভক্তদের অসুবিধা না হয় সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে। তবে উল্লেখ্য যে, বিগতবছর গুলোতে জেলা পরিষদের আয়োজনে বাংলাদেশ সীমান্তে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নানান জটিলতায় আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। এবিষয়ে স্থানীয় ব্যক্তি গোপাল কুমার, নারায়ন দাস, তপন কুমার বলেন, দেশ বিভাগের অনেক আগে থেকেই সীমান্তের ইছামতি নদীর উভয় তীরে দুর্গা পূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে মেলা বসে আসছে। দেশ বিভাগের পরও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি সীমান্তের সীমারেখা। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এ মেলা কখনও বন্ধ হয়নি। সারা বছর ধরে শুধু ইছামতি নদীর পাড়ের মানুষ নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ দিনটির জন্যে থাকে অপেক্ষায়। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিজর্সন উপলক্ষ্যে ইছামতির উভয় পাড়ে বসে নানারকমের দোকান। আত্বীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ছাড়াও এখানে আসা মানুষ উভয়ের মধ্যে ভাব বিনিময় শেষে সন্ধ্যার পরে ফিরে যায় যে যার দেশে, যে যার ঘরে। বাঙ্গালীর জাতীর সর্বজনীন উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা বিজয়া দশমী প্রতিমা বিসর্জন ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে সকলের মাঝ থেকে। আগামী প্রজন্ম হয়ত আর উপভোগ করতে পারবে না উৎসব মূখর এই আনন্দঘন দিনটি। দু-দেশের জটিলতায় হয়ত একদিন সকলের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবে দিনটি।
পূর্ববর্তী পোস্ট