ল্যাপটপ থেকে ভিডিও গেমস মুছে ফেলার দায়ে চার বছর বয়সী এক শিশুর ওপর পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে। বস্তায় ভরে শিশুটিকে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক জখমের পর ফেলে দেওয়া হয়েছে নির্জন বাগানে।
বুধবার সন্ধ্যায় উদ্ধারের পর শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় তরিকুল ইসলাম রিফাত (২৫) ও রাকিব হোসেন (২৩) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনাটি লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ভূঁইয়ারহাট এলাকার।রায়পুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সোলায়মান বলেন, ‘নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুর সঙ্গে কথা বলেছি। তার মুখে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ’
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনার শিকার শিশু ফায়েজ হোসেন পিয়াসের (৪) বাবা নির্মাণ শ্রমিক মোহাম্মদ সোহেল। তাদের বাড়ি বামনী গ্রামে। পূর্বপরিচিত যুবক রিফাত শিশুটিকে প্রায়ই নিজ ল্যাপটপে ভিডিও গেমস খেলতে দিত।
গত শনিবার রিফাতের ল্যাপটপ থেকে একটি গেমস ফোল্ডার মুছে যায়। তা শিশু পিয়াস করেছে বলে সন্দেহ করতে থাকে। বুধবার বিকেলে পিয়াসকে চকোলেট খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে রিফাত নিয়ে যায় ভূঁইয়ারহাট এলাকার কচিকাঁচা কিন্ডারগার্টেনে। সেখানে একটি কক্ষে পিয়াসকে আটকে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে শিশুটিকে ভরা হয় পেঁয়াজ রাখার বস্তায়। মারধরের পর তাকে পাশের সুপারিবাগানে ফেলে রাখা হয়।সন্ধ্যায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে স্বজনরা শিশুর কান্না শুনে সুপারিবাগানের দিকে যায়। সেখানে হাত বাঁধা ও বস্তাবন্দি অবস্থায় পাওয়া যায় পিয়াসকে। তার বাঁ চোখে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়। রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল এবং পরে রাত ১০টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পিয়াসকে। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, শিশুটির চোখে ও মুখে বেশ কিছু জখম রয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাবা মো. সোহেল বলেন, ‘আমার অবুঝ শিশুকে বস্তায় ভরে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সে বাঁ চোখ খুলতে পারছে না। যে পাষণ্ডরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমি তাদের শাস্তি চাই। ’
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, শিশু নির্যাতনের এ ঘটনায় দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে উপজেলার বাসাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তরিকুল ইসলাম রিফাত ও রাকিব হোসেনকে। রিফাত চরবগা গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে। আর রাকিবের বাড়ি বামনী গ্রামে। তার বাবার নাম তৌহিদুর রহমান। গ্রেপ্তারকৃত এ দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিয়াসকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে।