টিভিতে একটা ডিবেটের অংশ দেখে হতবাক আমি। উপস্থাপক বললেন, আমি নাকি বলেছি, ‘ডুব’ ছবি বাংলাদেশের মাথা নিচু করেছে।
মিথ্যে বলেছেন। আমি বলেছি ‘ডুব’ দেখে আমি মাথা নিচু করে হল থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমি তো বাংলাদেশ নই!
তাহলে কী করে ওঁরা বলেন, বাংলাদেশের মাথা নিচু হয়েছে? ফারুকী বলেছেন, উনি তো পারলেন না, আমি যেন বাংলাদেশের মাথা উঁচু করি। শ্লেষ ছিল তাঁর মন্তব্যে। না, বাংলাদেশের মাথা উঁচু করার মতো যোগ্যতা আমার নেই।
ফারুকীর আরও একটি মন্তব্য শুনে আমি তাজ্জব, আমি লেখক মানুষ, সেকারণে আমি নাকি সিনেমা বুঝি না। ‘সা রে গা মা’ না জেনে গান সম্পর্কে তিনি যেমন বলতে পারেন, গান ভাল লেগেছে, অথবা লাগেনি, এর বেশি নয়। আমারও বলা উচিত ছিল ছবিটি ভালো লেগেছে, বা লাগেনি। বিশ্লেষণ করা, আমি যেহেতু সিনেমা বিশারদ নই, আমাকে মানায় না।
আসলে ভালো হতো, শ্লেষে সময় ব্যয় না করে যদি তিনি ধরিয়ে দিতেন বিশ্লেষণের ঠিক কোথায় কোথায় আমার ভুল ছিল।
সমালোচনা যখন শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে আসে, তাকে গ্রহণ করতে হয়। নিজের ভুলগুলো মানতে হয় আগামীতে যেন শুধরে নেওয়া যায়। অহংকার মানুষকে এক জায়গায় থামিয়ে রাখে। ঋতুপর্ণ ঘোষ অত বড় চিত্র-পরিচালক হয়েও বলতেন, তিনি সিনেমার ছাত্র। শিখছেন সিনেমা। বিনয় মানুষকে বড় করে।
ফারুকীর আচরণ এমন, তুমি যদি আমার ছবিকে ভালো বলো, তুমি ছবি বোঝো। আর যদি ভালো না বলো, তুমি ছবি বোঝো না। ‘পথের পাঁচালী’ দেখে লোকে খারাপ বলেছে, ‘ডুব’ দেখেও খারাপ বলেছে, সুতরাং ‘পথের পাঁচালী’ আর ‘ডুব’কে এক কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। ‘বুদ্ধি-সুদ্ধি আছে এমন মানুষ কী করে এই চেষ্টা’- জেনে বুঝে করে আমি বুঝি না।
(তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)