মীর খায়রুল আলম: দেবহাটার সুশীলগাঁতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারনে যে কোন সময় বড়ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছে শিক্ষার্থীরা। ভবন ধক্ষসের আশঙ্কায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্কুলের ভবনের অধিকাংশ জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি অনেক স্থানে নতুন করে দেখা দেবে। জরাজীর্ণ ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরের কয়েকবারের মৃদু ভূকম্পনে ভবনটি আরো বেশি ফাটল দেখা দেয়। আর এ কারণে আকাশে ঝড়-বৃষ্টি দেখা দিলেই কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক বাসা বাঁধে। অতঙ্ক বিরাজ করায় লেখাপড়ায় বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন ভবন নির্মাণ না হলে যেকোনো সময় ভবন ধক্ষসে বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৫ সালে সুশীলগাতী, অজিজপুর, দেবহাটা(আংশিক)সহ কয়েটি গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের সুশিক্ষিত করতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কয়েক যুগের স্কুলে বর্তমানে ২০৯ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে ৭ জন। ২০০৬ সালে স্কুলের একটি নতুন ভবন তৈরি হয়। এসময় পূর্বের ভবনই ব্যবহারের অনুপযোগী বলে ঘোষণা দেন তারা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির অধিকাংশ স্থানে ফাটল। শিক্ষক রুমে বিশাল ফাটল। বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে-চুইয়ে পানি পড়ে। জরজীর্ণ ছাদের অনেক জায়গায় প্লাস্টার খসে পড়ছে। ৪র্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, আমরা ক্লাস করি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মনে হয় কখন যেন বিল্ডিং ধক্ষসে পড়ছে। ঝড়-বৃষ্টি হলে লেখাপড়া বাদ দিয়ে আল্লাহর নাম নেই। আর সূরা-কালাম পড়ি। সরকারের কাছে দাবী আমাদের স্কুলে যেনো নতুন ভবন তৈরি করে দেন। ঝড়-বৃষ্টির দিনে স্কুলে আসতে মা-বাবা বারণ করেন। বৃষ্টি-বাদল হলে স্কুলে ছাত্রছাত্রী কম আসে। এভাবে আর কতোদিন আমরা জীবন হাতে নিয়ে লেখাপড়া করবো। কয়েকজন শিক্ষক বলেন, স্কুল ভবনটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। জায়গায়-জায়গায় বড় রকমের ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে ছাত্র ছাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করে। এছাড়া একটি টিনশেড ঘরের অবস্থাও খারাপ। ঐ টিনশেড ঘরেও জায়গায়-জায়গায় পানি পড়ে। তারা আরো বলেন, স্কুলের ভবনের যে ভয়াবহ অবস্থা এবছর বার্ষিক পরীক্ষা নিতে খুব সমস্যা হবে। স্কুলের অফিস সূত্রে জানা যায়, নির্মিত হয় এই ভবনটি বর্তমানে একেবারে ক্লাস নেওয়ার অনুপযোগী হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, বিদ্যালয় নির্মানের কয়েক বছর যেতে না যেতে ভবনের বেহালদার সৃষ্টি হয়। সে সময়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম আর গাফিলাতির কারনে আজ এই করুন দশা। সেখান থেকে জরাজীর্ণ ওই ভবনের ছাদের প্লাস্টার বিভিন্ন সময়ে খসে পড়ছে। তবে ২০০৬ সালের পর থেকে এটির মাত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ইতোপূর্বে উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারও পরিদর্শন করেছেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি। পরে ঐ ভবনটি ভেঙ্গে ঐ স্থানে নতুন ভবন নির্মাণ করার পরিবর্তে ওর সাথে নতুন ভবনও একই সাথে জয়েন্ট ছাদ দেওয়া হয়। কয়েকজনের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললে তারা ক্ষোভের সুরে বলেন, এ দেশে এতো উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ যেখানে মানুষ গড়া হয়, সেই জায়গাটাকে গড়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মতিবুল ইসলাম বলেন, ভবনটির অবস্থা খুবই খারাপ। তারপরও ঝূঁকি নিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। ভবনটি নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি। যেকোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। ঘটতে পারে বড় ধরণের দূর্ঘটনা। এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) দেবাশিষ সিংহ বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি। তাছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এদিকে, দূর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি নজর দিলে বড় ধরণের দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা হতে পারে বলে ধারনা সকলের।
পূর্ববর্তী পোস্ট