নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাতক্ষীরায় অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে জামায়াত-শিবিরের এনজিও স্টুডেন্টস ট্যালেন্ট এ্যাসিস্টেন্স ফোরাম (স্টাফ)। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সাতক্ষীরা জামাতের আমির মাওলানা আব্দুল খালেক ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর অঞ্চলের তৎকালীন জামাত দলীয় এমপি গাজী নজরুল এর লিখিত সুপারিশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া রাজাকার শিরোমনি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রী থাকাকলীন তার মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন পায় সাতক্ষীরার এই বিতর্কিত এনজিও স্টাফ।
শুরু থেকেই তারা নিবন্ধনের শর্ত ভেঙে লক্ষ লক্ষ টাকার কথিত বৃত্তি বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল সাতক্ষীরার হাজার হাজার স্কুল পড়–য়া শিশুদের নিয়ে। নিবন্ধনের শর্তে স্পষ্টতই বলা আছে, সেবা প্রদানের বিনিময়ে এই সংস্থা কোন প্রকার ফিস গ্রহণ করতে পারবে না। অথচ কথিত বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মাথাপিছু ১৫০ টাকা করে প্রত্যেক শিশু পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে গ্রহণ করে স্টাফ। বিনিময়ে এককালীন ট্যালেন্টপুলে ৬০০ ও সাধারণ গ্রেডে ৪০০ টাকা করে বৃত্তি দেয়। অর্থাৎ মাছের তেলে মাছ ভেজেও বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত পরীক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। উপড়ি হিসেবে থাকে সমাজের বিত্তশালীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা অনুদান। আর এই অনৈতিক কার্যক্রমে এদেরকে মদদ দেয় বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন ও সরকারি-বেসরকারি স্কুলের কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকরা। ৪ দলীয় জোট সরকারের পতনের পর এরাও গিরগিটির মত রং বদলে আওয়ামীলীগ সরকারের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের উপর ভর করতে শুরু করে। তাদেরকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি করা, পরিচালনা কমিটিতে স্থান দিয়ে সম্মানিত করাÑ ইত্যাদির মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ও অনৈতিক কার্যকলাপকে আড়াল করার চেষ্টা করে। সম্প্রতি দেশের একটি শীর্ষ ও প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা যেটিকে সরকারে চোখ ও কান বলা হয় তাদের সাতক্ষীরা অফিসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংস্থাটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৩ আগস্ট’১৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে ০৩.০৭৯.০১৬.০৪.০০১২.০২০১৬-৮৪৪(৩) নং স্মারকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়কে স্টাফের সকল কার্যক্রম স্থাগিত করে এর নিবন্ধন বাতিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ১৬ নভেম্বর ’১৭ তারিখে ৪১.০০.০০০০.০৩৪.০০১.১৫.১৬-১১৮৮ নং স্মারকে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়কে স্টাফ এর সকল কার্যক্রম স্থগিত করে তাদের নিবন্ধন বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। এর সূত্রে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয় গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে ৪১.০১.৮৭০০.০০০.২৭.০০৬.১২ নং স্মারকে স্টাফ’র চেয়ারম্যান/সেক্রেটারিকে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।
এসব নিদের্শ উপেক্ষা করে স্টাফ কর্তৃপক্ষ সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের এজেন্ট শিক্ষকদের মাধ্যমে কথিত বৃত্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করেছে ১৫০টাকা হারে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তারা এভাবে কয়েক লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছে। আগামিকাল ২০ ডিসেম্বর তারা এসব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ায় চেষ্টা চালাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে সরকারি দলের একজন মহিলা এমপিসহ অনেকেই গোপনে এই জামাত-পন্থীদের মদদ দিচ্ছেন।
সংগঠনটির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ থাকায় কারণে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ভবন বরাদ্দ না দিলেও সাতক্ষীরা নাবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক তাদেরকে কেন্দ্র করার জন্য ভবন বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বিশেষ সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশায় বিতর্কিত এই সংস্থাকে স্কুল ভবন ব্যবহারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্টাফ’র কথিত বৃত্তি বাণিজ্যে অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী। অথচ বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা পাবেন শিক্ষার্থী প্রতি এককালীন মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ শত টাকা। যে টাকা শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফি বাবদ গ্রহণ করা হবে প্রায় সেই পরিমাণ টাকা বৃত্তি বাবদ দেয়া হবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার নিকট থেকে পাওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান আত্মসাৎ করবে এই সংস্থার পরিচালক অথবা যাবে জামাত-শিবিরের মতাদর্শ প্রচারের ফান্ডে।
এ বিষয়ে স্টাফ’র পরিচালক শফিকুল ইসলামের (০১৭২০ ৫২৯৪১৩) সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কি কারণে করা হয়েছে এবং কোথা থেকে করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলতে বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এবিষয়ে নবারুণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, তারা আমাকে ডিসি স্যারের একটি অনুমতি পত্র দেখিয়েছিলো। সেখানে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে করার অনুমতি ছিলো। সেখানে আমরা অনুমতি দিয়েছিলাম।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন বলেন, স্টাফের কার্যক্রম স্থাগিত করার নির্দেশ এসেছে। এটি আসার পরে তারা আমার কাছে এসছিলো আমি তাদের কোন অনুমতি দেই নি। তবে বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষ কেন্দ্র করার অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, সেটি অনেক আগের।
জেলা সমাজ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবাশিষ সরদার জানান, আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়েছি এবং স্টাফ কর্তৃপক্ষকে তাদের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও তারা যদি কোন প্রকার নির্দেম অমান্য করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।