নাটকীয় মোড় নেওয়া মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে নতুন করে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন দেশটির কিংবদন্তি নেতা মাহাথির মোহাম্মদ। আগস্টে অনুষ্ঠেয় প্রধানমন্ত্রী পদে তার প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দলগুলোর জোট। আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ৯২ বছর বয়সী মাহাথির শুধু নির্বাচনেই আসছেন না, তিনি জোট বেঁধেছেন তার শত্রু হিসেবে পরিচিত আনোয়ার ইবরাহিমের সঙ্গে। ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা মাহাথির এবারও নির্বাচিত হলে তিনি হবেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী। মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইবরাহিম একসময় পরস্পরের ঘোর বিরোধী ছিলেন। শত্রুও বলা যেতে পারে। একজন আরেকজনের নাম শুনতে পারতেন না। মাহাথিরের ঘোর বিরোধী ছিলেন আনোয়ার ইবরাহিম। তাকে দেখা হতো মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে এক উদীয়মান তারকা হিসেবে। কিন্তু তাদের মধ্যকার এই বিরোধে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে আনোয়ার ইবরাহিমকে উপপ্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর বলাৎকার ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তাকে জেলে পাঠানো হয়। তারপর বিরোধী রাজনৈতিক একটি জোটের নেতৃত্ব দেন ইবরাহিম। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিস্ময়কর বিজয় পান। ওই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হন নাজিব রাজাক। পরে ২০১৪ সালে বলাৎকারের অভিযোগে অভিযুক্ত করে জেলে পাঠানো হয় আনোয়ার ইবরাহিমকে। তার বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রাজনৈতিক পদ ব্যবহারের অযোগ্য ঘোষণা করা হয় তাকে। অযোগ্য ঘোষণা করা হয় পরবর্তী নির্বাচনে। এ নির্বাচন এ বছরই হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু পরের বছরই ২০১৫ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ তহবিল ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদের (ওয়ানএমডিবি) অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এর জেরে নাজিবের পদত্যাগের দাবিতে বিরোধীদের আন্দোলনে শরিক হন মাহাথির মোহাম্মদ। গঠন করেন পারতি প্রিবুমি বারসাতু মালয়েশিয়া (পিপিবিএম)। ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল পার্টিকে পরাজিত করতে পরে গত বছর বিরোধীদের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক জোটে যোগ দেন। এখন সেই জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মাহাথির মোহাম্মদের নাম ঘোষণা করা হলো। এর মধ্য দিয়ে তাদের জোট চায় নির্বাচনে বিজয় অর্জন করতে। যদি সেটা করা যায় তাহলে আনোয়ার ইবরাহিমের ক্ষমতায় ফেরা এবং পরে কোনো একসময় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ তৈরি হবে। যদি নির্বাচনে বিরোধীরা বিজয়ী হয় তাহলে তারা সময় ক্ষেপণ না করে আনোয়ার ইবরহিমকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় রাজকীয় ডিক্রি আদায়ের চেষ্টা করবে। এমন ডিক্রি জারি হলে আনোয়ার ইবরাহিমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে কোনো বাধা থাকবে না। বিরোধীদলীয় জোটের এক সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন সেক্রেটারি জেনারেল সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ। এ ছাড়া নির্বাচনে বিরোধীদলীয় জোট থেকে উপপ্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হবেন আনোয়ার ইবরাহিমের স্ত্রী ওয়ান আজিজা ওয়ান ইসমাইল।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান বলছে, মালয়েশিয়ার বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইবরাহিম। কিন্তু তাকে বিভিন্ন অভিযোগে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরেছে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে। তবে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যাই হোক, আগস্টের মধ্যে তাকে জাতীয় নির্বাচন দিতেই হবে, যদি কোনো অঘটন না ঘটে। সেই নির্বাচনে তার সামনে এখন সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠলেন মাহাথির মোহাম্মদ। ইতিমধ্যে ক্যারিশমা দেখাতেও শুরু করেছেন মাহাথির। তিনি তার নতুন দল পিপিবিএমের সভায় আগের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। কারণ ক্ষমতায় থাকাকালে মাহাথিরের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের হেনস্তার অভিযোগ ছিল বেশ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা এখন মাহাথিরের রাজনৈতিক জোট পাকাতান হারাপানের (পিএইচ) অংশ। আরেকটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, তিনি পিকেআর ডি ফ্যাক্টো নেতা আনোয়ার ইবরাহিমকে জেলবন্দী করে নাজিব রাজাককে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছিলেন। সেই সময় নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলত্যাগী নেতাদের ‘আবর্জনা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন মাহাথির। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে শনিবার মাহাথির বলেন, ‘অন্য মানুষদের মতো আমারও কথা ও কাজে ভুল হতে পারে। আমি আমার অতীতের সব ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি। কেবল আজকের জন্য নয়, যত দিন ধরে আমি রাজনীতিতে আছি, তত দিনের জন্য। তবে আমি একাকী কোনো ভুল করিনি।’