মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ এখনো চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের এক ঊর্ধ্বতন মানবাধিকার কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্ড্রু গিলমুর বলেন, ছয়মাস আগে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমনাভিযানের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গারা গ্রামছাড়া হওয়ার পর আজো সেই ভয়াবহতায় ছেদ পড়েনি। রোহিঙ্গাদের অনাহারে রেখে মারা হচ্ছে।
কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে টানা চারদিনের পরিদর্শন শেষে তিনি কথাগুলো বলেন।
এক বিবৃতিতে গিলমুর বলেন, ”রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার এখনো জাতিগত নিধন ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজের চোখে যা দেখেছি এবং শরণার্থী শিবিরে আশ্রিতদের মুখ থেকে যা শুনেছি, তারপর আমার মনে হয় না যে একথা বলা ছাড়া আর কিছু বলার আছে।”
শরণার্থী শিবিরগুলোতে মিয়ানমার থেকে সদ্য পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পর গিলমুর বলেন, “শুধু নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে। গত বছর রাখাইনে উন্মত্ত রক্তপাত, হত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞ চলেছিল। আর এখন সেখানে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জোর করে অনাহারে রেখে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ও ত্রাস সৃষ্টি করে মিয়ানমার তাদেরকে বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করার ফন্দি এঁটেছে বলেই মনে হচ্ছে।”
বাংলাদেশের সঙ্গে গতবছর নভেম্বরের একটি চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে আসলেও রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের খুব শিগগিরই নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে এবং স্থায়ীভাবে সেখানে প্রত্যাবাসন ‘অসম্ভব’ বলেই মনে করেন জাতিসংঘের এ মানবাধিকার কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “মিয়ানমার সরকার খুব করিৎকর্মা হয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে জানাচ্ছে। অথচ, তাদের সেনারা এখনো ঠিকই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করে যাচ্ছে।”
মিয়ানমারে গত বছর ২৫ অগাস্ট সীমান্তের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হয়।
মিয়ানমার সরকার একে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান’ বললেও জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো একে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান বলে আসছে।
এ অভিযান শুরুর পর গত ছয় মাসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বা পোড়া ক্ষত শরীরে বয়ে নিয়ে এসেছে। কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গার ভাষ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র উঠে আসে।
মিয়ানমারের সেনা এবং স্থানীয় বৌদ্ধরা সেখানে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালানোসহ বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। যা নিয়ে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন মিনায়মার সরকারকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।