বাংলাদেশ এর আগে কখনই এত রান তাড়া করে জিতেনি। সর্বোচ্চ ১৬৪ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে টাইগারদের। সম্প্রতি হারতে হারতে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদের দলের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি জয়ের। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফির মঞ্চে ধরা দিল সেই জয়। আত্মবিশ্বাস ফেরানো এক জয়। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২১৫ রানের টার্গেটে ২ বল এবং ৫ উইকেট হাতে রেখেই পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। এটিই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। যে জয়ে শেষের নায়ক হয়ে থাকলেন মি. ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম।
২১৫ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে সৌম্য সরকারকে নামিয়ে দিয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী করা হয়েছিল লিটন দাসকে। এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ব্যাটিং তাণ্ডবে ছাড়িয়ে যান তামিমকেও। মাত্র ১৯ বলে ৪৩ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস উপহার দেন তিনি। চার মেরেছেন মাত্র ২টি, কিন্তু ছক্কা ৫টি! ৭৪ রানের চমৎকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙে নুয়ান প্রদীপের বলে লিটন এলবিডাব্লিউ হলে। তিন নম্বরে নেমে ধীর শুরু করেন সৌম্য। অপরপ্রান্তে হাফ সেঞ্চুরির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন তামিম।
কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন! দলীয় ১০০ রানে থিসারা পেরেরার বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে যান ২৯ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় ৪৭ রান করা দেশসেরা ওপেনার। উইকেটে এসেই আক্রমণ শুরু করেন মুশফিক। তার সঙ্গী একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর সৌম্যর ব্যাটে আত্মবিশ্বাস দেখা যায়। কিন্তু ২২ বলে ২৪ রান করে তিনি শিকার হন নুয়ান প্রদীপের। ১৪.২ ওভারে দলের রান তখন ১৫১।
অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহর সঙ্গে বিধ্বংসী ব্যাটিং শুরু করেন মুশফিকুর রহিম। ২৪ বলে ৪ চার ৩ ছক্কায় তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ১৫ বলে দরকার ২২ রান। এমন মুহূর্তে চামিরাকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ১১ বলে ২০ রান করা মাহমুদ উল্লাহ। শংকা ভর কর টাইগার শিবিরে। ম্যাচের এই পরিস্থিতিতে ০ রানে রান-আউট হয়ে যান সাব্বির। একাই ব্যাট হাতে শাসন করতে থাকেন মুশফিক। তার ব্যাটেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২১৪ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা আর কুশল মেন্ডিসের সামনে অসহায় লাগছিল বাংলাদেশি বোলারদের। ৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে মুস্তাফিজের বলে ১৯ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ২৬ রান করা গুনাথিলাকার বিদায়ে। বিধ্বংসী কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে দলের হাল ধরেন কুশল পেরেরা। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল মেন্ডিস। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছিল না শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের।
১৩ ওভারের মধ্যে ৬ বোলার ব্যবহার করে ফেলেন অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। অতঃপর ১৪তম ওভার নিজেই বল হাতে তুলে নেন অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ। ওভারের দ্বিতীয় এবং পঞ্চম বলে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠালেন ৩০ বলে ৫৭ করা কুশল মেন্ডিস এবং দাসুন শানাকাকে (০)। দুটি ক্যাচই নিয়েছেন সাব্বির রহমান।
সাব্বির ইনিংসে তৃতীয় ক্যাচটি নেন লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালের (২)। বোলার এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়া তাসকিন। কিন্তু তাতে রানের গতি এতটুকু কমেনি। উপুল থারাঙ্গাকে সঙ্গী করে ভয়ংকর হয়ে ওঠা কুশল পেরেরা শেষ ওভারে মুস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে ৪৮ বলে ৮ চার ২ ছক্কায় ৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। এক বল পরেই ১৪ বলে ৩২ করা উপুল থারাঙ্গাকে নাজমুলের তালুবন্দি করেন মুস্তাফিজ। ২০ ওভারে লঙ্কানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২১৪ রান।
বাংলাদেশ দল: মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, নাজমুল ইসলাম অপু, মেহেদী হাসান মিরাজ।
শ্রীলঙ্কা দল: দানুশকা গুনাথিলাকা, কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা, দিনেশ চান্দিমাল, উপুল থারাঙ্গা, দাসুন শানাকা, থিসারা পেরেরা, জীবন মেন্ডিস, আকিলা ধনাঞ্জয়া, দুশমন্থ চামিরা, নুয়ান প্রদীপ।