অমন বড় কিছু করে দেখাতে পারেনি ব্রাজিল, গোল বন্যায় ভাসিয়ে দিতে পারেনি জার্মানিকে। কিন্তু এবার হয়তো কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে ব্রাজিলিয়ানরা। চার বছর আগে যাদের কাছে বিধ্বস্ত হতে হয়েছিল, সেই জার্মানিকে হারানো গেছে তাদেরই মাটিতে। এই জয়ে হয়তো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পুরনো সেই ক্ষতে প্রলেপ পড়বে।
মঙ্গলবার বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গাব্রিয়েল জেসুসের একমাত্র গোলে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছে নেইমারবিহীন তিতের দল।
চার বছর আগে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে জার্মানদের কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ব্রাজিল। ভূতুরে সেই ঘটনা এখনও দলটিকে তাড়া করে ফেরে বলে ম্যাচের আগে জানিয়েছিলেন তিতে। বিশ্বকাপের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচের তুলনা হতে পারে না। তারপরও স্বস্তির এই জয়ে ‘ভূতটাকে’ বুঝি তাড়াতে পারলো সবশেষ ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জয়ীরা।
আসছে বিশ্বকাপের স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ের চার দিন পর জার্মানির মাটিতে দলগত এই পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির প্রথম পর্বটা ভালোভাবেই সারলো ব্রাজিল।
অন্যদিকে, বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামার আগে দলের এই ম্যাচের পারফরম্যান্স ইওয়াখিম লুভকে কিছুটা দুর্ভাবনায় ফেলতে পারে। পুরো ম্যাচে ৫৮ শতাংশ বল দখলে রেখে একটি মাত্র শটই লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে তার শিষ্যরা।
প্রতিশোধের নেশায় মত্ত ব্রাজিল ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারতো। একাদশ মিনিটে প্রতিপক্ষের ভুলে বল পেয়ে একা ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ফিলিপে কৌতিনিয়ো। কিন্তু শট না নিয়ে পাওলিনিয়োর দিকে দুর্বল পাস দিয়ে হতাশ করেন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি ফুটবলার।
এরপর বেশ কিছুক্ষণ একটানা জার্মান রক্ষণে চাপ ধরে রাখে অতিথিরা। কিন্তু তাদের আক্রমণগুলো কখনও ডি-বক্সের বাইরে কখনও ভিতরে ভেস্তে যাচ্ছিল। মাঝে পাল্টা আক্রমণে ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার ইলকাই গিনদোয়ান ব্রাজিলের ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে উড়িয়ে মারেন।
কিছুক্ষণ পর চিত্রপটে ঘটে পরিবর্তন। গুছিয়ে ওঠা জার্মানি আক্রমণের পর আক্রমণ করতে থাকে। তবে ফলাফল একই। খেলার ধারার বিপরীতে ৩৬তম মিনিটে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে বিনা বাধায় বল উড়িয়ে মারেন গাব্রিয়েল জেসুস।
পরের মিনিটে আর ব্যর্থ হননি জেসুস। ডান দিক থেকে উইলিয়ানের ক্রসে জোরালো হেডে দলকে এগিয়ে দেন ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড। কেভিন ট্রাপ সোজাসুজি আসা বল ঠেকালেও রুখতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে দারুণ পাসিং ফুটবলে সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। রক্ষণের বাধা এড়িয়ে কৌতিনিয়োর বাড়ানো বল পেয়ে শট নেন উইলিয়ান। কিন্তু গোলমুখে ঠেকিয়ে দেন ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার। কিছুক্ষণ পর দারুণ পজিশনে থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হেডে হতাশ করেন জেসুস।
গোল পেতে মরিয়া হয়ে শেষ দিকে একটানা আক্রমণ করে যায় স্বাগতিকরা। ভালো কয়েকটি সুযোগও তৈরি করে তারা; কিন্তু পুরোপুরি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া ব্রাজিলিয়ানদের সামনে সুবিধে করতে পারেনি।
যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ইউলিয়ান ড্রাক্সলারের দূরপাল্লার শট আলিসন ফিস্ট করে ফেরালে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি।
এরই সঙ্গে তাদের টানা ২২ ম্যাচ অপরাজিত পথচলায় ছেদ পড়লো। অন্যদিকে, জয়ের ধারা ধরে রাখলো ব্রাজিল। শেষ তিন ম্যাচে জয়সহ এই নিয়ে মোট নয় ম্যাচ অপরাজিত রইলো বাছাইপর্ব পেরিয়ে সবার আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া তিতের শিষ্যরা।
গত শুক্রবার স্পেনের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে ১-১ ড্র করছিল জার্মানি। এবার হেরেই গেল।