স্বাস্থ্য ডেস্ক: আমিষ মানব দেহ গঠনের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। এটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ অনু বলা হয় যা কোষ গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজ করে। এছাড়াও দেহের প্রত্যঙ্গগুলো এবং টিস্যু বা কলা নিয়ন্ত্রণ করে। নিসন্দেহে এটি অন্যতম মৌলিক ভূমিকা পালনকারী।
তার অর্থ এই নয় যে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে আমিষ খেতে হবে। আমিষ খাওয়ার ব্যাপারে কিছু সতর্কতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তা না হলে উপকারের চেয়ে অপকারের আশঙ্কাই বেশি। মানবদেহের মাত্র ৭% আমিষ, ৭০% পানি, ২০% চর্বি, ২ বা ৩% বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল দিয়ে গঠিত।
সুস্থ দেহে কতটুকু আমিষ প্রয়োজন? গবেষণা অনুযায়ী, একজন সুস্থ মানুষ মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ গ্রাম আমিষ খেতে পারবেন। এরমধ্যে ৮৫ শতাংশ আমিষ উদ্ভিদ থেকে গ্রহণ করতে হবে। যেমন- সশ্য, বীজ, শাক, সবজি, বাদাম ইত্যাদি থেকে প্রাকৃতিক আমিষ পেতে পারি। আর বাকি ১৫% প্রাণীজ আমিষ থেকে আমাদের দেহের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, শিম জাতীয় বীজ, শাক, সবজি, বাদাম ও বীজ ইত্যাদিকে বলা হয় লাইভ ফুড বা জীবন্ত খাদ্য। অপরদিকে মানুষের তৈরী বা মুখরোচক উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরী যেকোনো খাবারই দেহের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোকে বলা হয় ডেড ফুড বা মৃত খাদ্য। এগুলো অ্যাডিকটিভ উপাদান মিশিয়ে তৈরী করা হয় যা দেহের কোনো উপকার করে না।
মনে রাখতে হবে, মানুষ আমিষ ও নিরামিষ সবই খাবে তবে প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী। শুধু আমিষ বা শুধু নিরামিষ খেলে দেহ প্রয়োজন মতো তার উপাদানগুলো পাবে না। ফলে শারিরিক সমস্যা দেখা দেবে।
দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনের দিক থেকে মানুষ একই সাথে মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণী। মাংসাশী প্রাণী কোনো শস্য বা তৃণ খায় না অথবা একেবারেই কম পরিমাণে খায়। অপরদিকে মানুষ মাংসাশী হলেও তাদের গঠন প্রক্রিয়াটি বেশিরভাগ নিরামিষভোজী। খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ার দিক থেকে মানুষের ক্ষেত্রে এটিই প্রাকৃতিক ব্যখ্যা।
ফলে মানুষ যদি মাংশাশী প্রাণীর মতো শুধুমাত্র প্রাণীজ আমিষ বা ৭০% প্রাণীজ আমিষ বা মাংসজাত খাদ্য ও দুধ গ্রহণ করে, তাহলে ক্যানসার, ডায়েবেটিস, থাইরয়েড, মুটিয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা লাইফ স্টাইল জনিত নানা রোগের সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকে।
তবে অরগানিক মাছ, ঘাস খেকো প্রাণীর মাংস, ঘি, অরগানিক মুরগী দেহের জন্য উপকারি। সবচেয়ে বড় কথা, খাবারগ্রহণে পরিমিতিবোধ ও সংযম থাকতে হবে।
যতো বেশি আমিষ খাবেন, দেহে ততোবেশি অ্যাসিড উতপন্ন হবে, বিপাক বা রাসায়নিক বিক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হবে এবং দেহে ছত্রাকজনিত বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
তাহলে কী খেতে হবে?
১। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি।
২। অলিভ অয়েল, মেডিসিনাল নারিকেলের তেল, বাদাম, বীজ, অ্যাভোক্যাডো, তিষি, তিলের তেল, গ্রাস ফেড ঘি বা বাটার খেতে হবে
৩। ৮৫%সশ্যজাত আমিষ খেতে হবে। যেমন-ডাল, ছোলা। এবং ১৫% প্রাণীজ প্রোটিন।
৪। বাদাম জাতীয় খাবার- কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, অলনাট, পাইন নাটস, ব্রাজিল নাটস ইত্যাদি।
৫। বাছাইকৃত শরকরা- কুইনোয়া, লাল আটা, লাল চাল, কালো চাল, মিষ্টি আলু ও জব খেতে হবে। এগুলো মোট খাদ্যের ১৫% থাকবে।
৬। ফলের পরিমাণ সামান্য। যেমন- আপেল, বেদানা, পেপে, ডুমুর, আনারস। এগুলোতে প্রচুর অ্যানজাইম রয়েছে যা বিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
এই খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করতে পারলে প্রকৃতির মতোই সবুজ জীবন পাওয়া যাবে।