আসাদুজ্জামান: একজন ডাক্তারের প্রাইভেট কার চাপায় গুরুতর আহত সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৃষিডিপ্লোমাধারী যুবক শাহীন কাদির (২২) টানা ১৯ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা যাওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা দয়ের হয়েছে।
নিহতের মামা ফজলুল হক বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে ঘাতক প্রাইভেট কার চালক শ্যামনগর হাসপাতালের আরএমও ডা. আনিসুর রহমান ও তার সফর সঙ্গী সোহরাব মোড়লের নামে থানায় এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে শুক্রবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
নিহত যুবক শাহিন কাদির উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের শ্রীফলকাটি গ্রামের এসএম মুজিবর রহমানের ছেলে। সম্প্রতি সে কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের চেষ্টা করছিল। অপরদিকে, প্রাইভেট কার চালক ডা. আনিসুর রহমান একই উপজেলার হাওয়ালভাঙ্গি গ্রামের আবু দাউদ সরদারের ছেলে।
আহতের পারিবারিক সূত্র জানা যায়, গত ৩ জুন বিকালে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আনিসুর রহমান নিজে চালক না হয়েও বেপরোয়াভাবে নিজের প্রাইভেটকার (রেজি নং- ঢাকা মেট্রো -গ- ৩৫-১২১১) চালিয়ে শ্যামনগর অভিমুখে আসছিলেন। অপরদিকে শাহিন কাদির তার বন্ধু হাবিবুর রহমানের মোটর সাইকেলে বসে বিপরীতমুখে কালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে শ্যামনগর খানপুরে ফিলিং স্টেশনের কাছে একটি ছোট কালভার্টের ওপর প্রাইভেট কারটি শাহিন কাদিরকে চাপা দেয়। তাকে গুরুতর আহত দেখেও চালক ডা. আনিস সরাসরি শ্যামনগরের দিকে পালিয়ে যান। গ্রামবাসী এ সময় তাকে তাড়া করেও ধরতে ব্যর্থ হন। স্থানীয়রা শাহীন কাদিরকে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করলেও ডা. আনিস তার চিকিৎসায় সাহায্য করা এমনকি তার সামনেও আসতে অস্বীকৃতি জানান। টানা ১৯ দিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। তার মস্তিষ্কের ক্ষমতা ৭৫ ভাগ বিলুপ্ত হয়েছিল বলে ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন।
শাহীন কাদিরের বাবা এসএম মুজিবুর রহমান জানান, তার ছেলেকে শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরায় পরে খুলনা এবং সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ডা. আনিসুর রহমান তার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। চিকিৎসার শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এসব টাকা তিনি জমি বিক্রি ও বন্ধক এবং সমিতি থেকে লোন নিয়ে পরিশোধ করেছেন। তিনি ডা. আনিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
এদিকে, ডা. আনিসুর রহমানের কাছে টেলিফোন করা হলে তিনি বলেন, ওইদিন তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। তার ড্রাইভার সোহরাব মোড়ল গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে, শ্যামনগরের অনেক সংবাদকর্মী ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারি এবং সাধারন নাগরিকরা জানান, ডা. আনিসুর রহমান মাদকাসক্ত। এ কারণে তার হাতে কোনো রোগী নিরাপদ নন দাবি করে তারা বলেন তাকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্টও হয়েছে। তার হাতে বহু রোগীও মারা গেছে। তবে ডা. আনিস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি মাদকাসক্ত নন বলেও দাবি করেন।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আব্দুল মান্নান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে নিহতের মামা ফজলুল হক বাদী হয়ে ঘাতক প্রাইভেটকার চালক ডা. আনিসুর রহমানসহ দুই জনের নামে নিহতের মামা ফজলুল হক বাদী হয়ে রাতেই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি আরো জানান, আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযার অব্যাহত রয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট