দেশের খবর: রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি শতভাগ বাড়িয়ে ৮৩০০ টাকা করার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ এর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি-স্কেল ও ভাতা’ অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সময়ে সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে কমিশন করা হয়, তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে স্কেল নির্ধারণ করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছিল।
নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ৮ হাজার ৩০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মজুরি ১১ হাজার ২০০ টাকা।
আগে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৪ হাজার ১৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৬০০ টাকা ছিল।
২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন মজুরি এবং ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ভাতা কার্যকর হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
২০১৫ সালে সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ানোর পর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে চেয়ারম্যান করে ‘জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫’ গঠন করা হয়।
এই কমিশন গত বছরের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম ৮ হাজার ৩০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬০০ টাকা মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল।
সর্বশেষ ‘জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন ২০১০’ এ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ মজুরি ৫ হাজার ৬০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এর পর তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয় ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর। তিন হাজার টাকা মূল বেতন ধরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয়েছিল তখন। নতুন কাঠামোয় ওই বেতন তারা পাচ্ছেন ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে।
কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলো।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার শ্রমিকরা আগের মতই মূল মজুরির ৫০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা, মূল বেতনের সমান দুটি করে উৎসব ভাতা, ছুটি নগদায়ন অথবা অবসরকালীন ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ল্যাম্প-গ্রান্ট এবং মূল বেতনের ১০ শতাংশ কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা পাবেন।
এছাড়া প্রতি বছর চাকরির জন্য দুই মাসের মূল মজুরির গ্র্যাচুইটি, মূল মজুরির ৩০ শতাংশ তবে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পাহাড়ি ভাতা, প্রতি রাতে ঘণ্টাপ্রতি ১৫ টাকা হারে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা নাইট শিফট ডিউটি ভাতা, ২০ শতাংশ হারে নববর্ষ ভাতা এবং বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাবেন।
এর বাইরে প্রতি মাসে ২০০ টাকা যাতায়াত ভাতা, ১০০ টাকা ধোলাই ভাতা, ২০০ টাকা টিফিন ভাতা, মূল মজুরির ১০ শতাংশ তবে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা রোটেটিং শিফট ডিউটি ভাতা এবং ৪০০ টাকা করে ঝুঁকি ভাতা পাবেন রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার শ্রমিকরা।
নতুন মজুরি কাঠামোয় শ্রমিকদের জন্য আগের মতই গ্রুপ ইন্সুরেন্স সুবিধা রাখা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, এক সন্তারের জন্য ৫০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য মাসে এক হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা ভাতা পাবেন তারা। আর নারী শ্রমিকরা পাবেন ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি।