খেলার খবর: এক দল হটফেভারিট হয়ে রাশিয়ায় পা রেখেছিল, আরেক দল তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে আদায় করেছে ফেভারিটের মর্যাদা। রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ কোয়ার্টার ফাইনাল মঞ্চস্থ করতে প্রস্তুত কাজান অ্যারেনা। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় মুখোমুখি হচ্ছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও মাত্র একবার সেমিফাইনাল খেলা বেলজিয়াম।
ব্রাজিল ও বেলজিয়ামের ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে নাগরিক, মাছরাঙা, সনি টেন ২ ও টেন ৩ চ্যানেল।
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্রয়ে শুরুটা হতাশার ছিল ব্রাজিলের। তারপর কোস্টারিকার সঙ্গে ইনজুরি সময়ের জোড়া (২-০) গোলে জিতে ফেরার আভাস দেয় তারা। সার্বিয়া তো পাত্তাই পেল না। তবে ব্রাজিল তাদের আসল চেহারা দেখাল শেষ ষোলোতে। বিশেষ করে নেইমারের ফর্মে ফেরার পর সেলেসাওদের আশা আরও দৃঢ় হয়েছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে পিএসজি স্ট্রাইকার গোল করেছেন, করিয়েছেনও।
চার ম্যাচের সবগুলো জেতা বেলজিয়ামের বিপক্ষে নেইমারকে ঘিরে দারুণ কিছুর স্বপ্ন দেখছে ব্রাজিল। ‘ফেভারিট’ হয়ে রাশিয়ায় পা রাখা দলটি এখন সত্যিই শিরোপার দাবিদার। ‘হেক্সা’র স্বপ্ন পূরণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পেরোতে হবে বেলজিয়ান বাধা। ইউরোপিয়ান দলটির শক্তিশালী আক্রমণভাগকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে প্রস্তুত তাদের চমৎকার রক্ষণভাগ। গোলরক্ষক অ্যালিসনকে খুব বেশি কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়নি থিয়াগো সিলভা ও মিরান্দাদের প্রতিরোধে। এই বিশ্বকাপে মাত্র একবার তাদের জালে বল জড়িয়েছে। সব মিলিয়ে গত ২৫ ম্যাচে তিতের দল ‘ক্লিন শিট’ রেখেছে ১৯ ম্যাচে।
তারপরও সতর্ক কোয়ার্টার ফাইনালের এই ম্যাচে ব্রাজিলের অধিনায়কত্ব পাওয়া মিরান্দা। প্রতিপক্ষের সব খেলোয়াড়কে নিয়ে সতীর্থদের হুঁশিয়ার থাকতে বলেছেন এই ডিফেন্ডার, ‘বেলজিয়াম কেবল (রোমেলু) লুকাকু নয়। তারা অনেক শক্ত আগ্রাসী দল। কিন্তু প্রতিপক্ষকে থামানোর প্রধান উপায় হলো মাঠে থাকা সব খেলোয়াড়কে নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, তাদের বেশ কয়েকজন মানসম্পন্ন খেলোয়াড় আছে। তারা অনেক দক্ষ। প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে নিষ্প্রভ করে দিতে আমাদের ডিফেন্ডাররা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে।’
ফুটবল বিশ্বকাপের অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত বেলজিয়ামও। গ্রুপে শতভাগ সাফল্য পাওয়া দলটির জন্য এটা হতে যাচ্ছে সবচেয়ে কঠিন লড়াই। যদিও শেষ ষোলোতে জাপানের বিপক্ষে খাদের কিনারে পড়ে গিয়েছিল তাদের সব আশা। তবে সব শঙ্কা দূর করে ওই ম্যাচটিই তাদের উজ্জীবিত করে তুলছে।
জাপানের বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ৩-২ গোলের জয় মানসিকভাবে বেলজিয়ামকে চাঙ্গা রাখবে নিশ্চিত বলা যায়। ১৯৮৬ সালের পর প্রথম সেমিফাইনালের টিকিট পেতে যে জিততেই হবে ‘সোনালি প্রজন্ম’কে।
কিন্তু পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে নিজেদের আন্ডারডগ বলে স্বীকার করে নিলেন কোচ রবেতো মার্তিনেস, ‘এটা একটা বিশাল উপলক্ষ। আপনি এটা লুকাতে পারবেন না। যদি সেই চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি বোকা।’ স্প্যানিশ কোচ আরও বলেছেন, ‘আমরা এই উপলক্ষটি রাঙাতে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছি। এই টুর্নামেন্টে আমরা বিকশিত হচ্ছি। এই দলের মধ্যে সত্যিই বিশেষ কিছু আছে।’
দলের মধ্যে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস দেখতে পাচ্ছেন মার্তিনেস, ‘সবাই যে ইতিবাচক, সেটা স্পষ্ট। ফুটবল মাঠে ভালো করার আকাঙ্ক্ষা সবার মধ্যে। মাঠে নামতে আর তর সইছে না। আমার মনে হচ্ছে আমরা আমাদের সেরা প্রস্তুতি নিয়েছি।’
দুই দলেই আছে বিশ্বমানের আক্রমণভাগ। তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু মার্তিনেস মনে করিয়ে দিলেন সবচেয়ে বড় পার্থক্য, ‘পার্থক্য হলো আমরা একটিও বিশ্বকাপ জিতিনি, এটা বুঝতে পারা খুব সহজ।’
অবশ্য ব্রাজিল কোচ তিতে মনে করেন লড়াইটা হবে রোমাঞ্চে ভরপুর, ‘এটা হবে সেরা একটি ম্যাচ। দুই দলই সুন্দর ফুটবল খেলে এগিয়ে যাচ্ছে। বেলজিয়ামের সেরা খেলোয়াড় আছে, কোচও সেরা। আমি সবসময় তাদের ফেভারিটের (শিরোপার জন্য) দলে রেখেছি।’