রাজনীতির খবর: গত দশ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে দলের ভেতরে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, দ্বন্দ্ব-কোন্দল দেখা দিয়েছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব কাটিয়ে তুলতে বদ্ধপরিকর ক্ষমতাসীনরা। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশের জেলা-উপজেলা, মহানগর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের গণভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ২৩ জুন থেকে শুরু হয়েছে তাদের ঢাকায় ডেকে আনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চান বলে তৃণমূল নেতাদের অবহিত করেছেন।
সারাদেশের সাংগঠনিক জেলার নেতা,স্থানীয় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছেন- ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার শক্তি কারও নেই। এরপর ৩০ জুন ও ৭ জুলাই সারাদেশের মহানগর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা ও দলীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের গণভবনে ডেকে দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি সাক্ষাতে তারা উজ্জীবিত, একথা স্বীকার করলেও তৃণমূল নেতারা বলছেন- শুধু নির্দেশনা দিয়ে দলে ঐক্য ফেরানো যাবে না। এটা খুবই কঠিন কাজ। দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করে দলে ঐক্য ফেরাতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সেল করতে হবে। সেখানে অভিযোগ জমা পড়লে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। সারাদেশে অন্তত এক ডজন ঘটনার শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে এক মাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর হয়ে দলে ঐক্য ফিরে আসবে।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, ‘ঢাকায় ডেকে নির্দেশনা দিলেও এলাকায় যেতে যেতে তা ভুলে যায় আমাদের নেতারা।’ তারা আরও বলেন, ‘টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে মৌসুমী নেতার সংখ্যা বেড়েছে। দলের ভেতরে কীভাবে অনৈক্য সৃষ্টি করে রাখা যায় তা নিশ্চিত করতে তারা দলে জায়গা করে নিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক বলেন, ‘কোন্দলের মূলে রয়েছে আদর্শিক দ্বন্দ্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগে আদর্শিক কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। টানা ক্ষমতায় থেকে দলে আগাছা-পরগাছা জন্ম নিয়েছে। তারা কোন্দল জাগিয়ে রাখতে চায়।’
টাঙ্গাইলের এই নেতা আরও বলেন, ‘দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করে দলে ঐক্য ফেরাতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সেল করতে হবে। কোথায় কোন্দল আছে, কেন আছে? তারা দলের আদর্শিক কর্মী নাকি সুবিধাভোগী—এগুলো চিহ্নিত করে অ্যাকশনে নামতে হবে। আগাছা-পরগাছাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই ঐক্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী বলেন, ‘দলে মৌসুমী নেতাদের আধিপত্য দূর করতে হবে।’ তার দাবি, আওয়ামী লীগের ঐক্য ধ্বংস করতেই দলে মৌসুমী নেতারা ঢুকছে দলে। সুতরাং তারা যতদিন থাকবে দ্বন্দ্ব-কোন্দল থাকবে,ঐক্য ফেরানো কঠিন কাজ।তিনি আরও বলেন,‘কেন্দ্রকে এগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু বলেন,‘যেসব এলাকায় দ্বন্দ্ব-কোন্দল বিরাজমান,সেই অঞ্চল চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে নজির স্থাপন করতে হবে। তবেই ঐক্য ফিরে আসবে।’
পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দলের ঐক্য অটুট রাখা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঐক্য সুনিশ্চিত করতে হলে আওয়ামী লীগকে কঠোর হতে হবে।’