রাজনীতির খবর: সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের গ্রেফতার করা হলেও জামায়াতে ইসলামীর কোনও নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এতদিন গোপনে থাকলেও এখন প্রকাশ্যে এসেছে। তারা অবাধে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছে। ফলে বিষয়টি পরিষ্কার যে তারা সরকারের ফাঁদে পা দিয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরকারের গোপন সখ্য রয়েছে। আর এই দলটি সরকারের ফাঁদে পা দিয়েছে এবার। সিটি নির্বাচনের আগে সিলেটে জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম নীরব থাকলেও এখন তা সম্পূর্ণ বিপরীত। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সিলেটে বর্তমানে অন্যান্য দলের চেয়ে তারাই বেশি সরব।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা সিলেটে প্রচারণায় নামলেই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। রাতে নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালায়। এক্ষেত্রে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা রয়েছে বিপদমুক্ত। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সিলেটে দুটি সাজানো মামলা হলেও জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও তাদের কোনও নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে না।’
সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি যেসব অভিযোগ করেছে, সেগুলো কোনোভাবেই সত্যি নয়। সিলেটে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জোটের অন্যান্য শরিক দলের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াত-শিবির। এবার সিলেট সিটি নির্বাচনে জোটের পক্ষ থেকে আমাদের মেয়র প্রার্থী দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দেননি। অথচ অতীতে তারা আমাদের কথাও দিয়েছিল। আমাদের সঙ্গে মিথ্যাচার করায় জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমরা প্রার্থী দিয়েছি।’ অভিযোগ রয়েছে—নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাইরে থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সিলেটে নিয়ে আসা হচ্ছে, এ প্রশ্নে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে এটা অনেকাংশেই সত্য। জামায়াতের প্রার্থী যেহেতু সিলেটে রয়েছেন—সেখানে প্রচারণার জন্য দলটির সাংগঠনিক নেতারা আসবেন, এটাই স্বাভাবিক।’
সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু পুলিশ জামায়াতের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে নমনীয়, বিএনপির এ অভিযোগের বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের মতো আমাদের নেতাকর্মীরা এত বেশি উচ্ছৃঙ্খল নন। আমরা নির্বাচন আচরণবিধি মেনেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পোড়ানোর মিথ্যা মামলা রয়েছে। শুধু আমি নই, আমার সঙ্গে অনেক সাথীও (ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক পদ) আছেন এই মামলার আসামি। নির্বাচনের আগে সিলেট নগরীতে আসলেই পুলিশের তালিকায় থাকা আমাদের মেসগুলোসহ সম্ভাব্য বাসাবাড়িতে অভিযান চালাতো পুলিশ। কিন্তু এবার এ ধরনের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। পুলিশ আমাদের অবস্থান জানলেও গ্রেফতার বা হয়রানি করছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমি নই, জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী দলের প্রার্থীর পক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের ফাঁকে আমরা দলের সদস্যও সংগ্রহ করে যাচ্ছি। ভোটের ফলাফলে বেরিয়ে আসবে ওয়ার্ডভিত্তিক জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক পরিসংখ্যান।’
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘জামায়াত বিভিন্ন সময় সিলেটকে তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে দাবি করেছে। এই নির্বাচন থেকেই বোঝা যাবে নগরীতে জামায়াতের কত ভোট রয়েছে। সুবিধাভোগীদের কাছ থাকে জামায়াত হয়তো এমন কোনও আশ্বাস পেয়েছে, যাতে তাদের নিজেদের কোনও লাভ নেই জানার পরও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘শুধু জামায়াত-শিবির নয়,সিলেটে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারাই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাবে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে।’
পুলিশ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করে শুধু বিএনপির নেতকর্মীদের গ্রেফতার করছে, বিএনপি নেতাদের এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ পুলিশের কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপির নেতারা যেসব অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। আমরা সব দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের নিরাপত্তা দিয়েই যাচ্ছি। নিরাপত্তা দিতে গিয়ে বরং পুলিশ হামলার শিকার হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, ২৭ জুলাই থেকে পুলিশ সিলেট মহানগরী এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালাবে। সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার ছাড়া বহিরাগতদের দেখলেই গ্রেফতার করা হবে। এজন্য তিনি সিলেট সিটির ভোটারদের ভোটার আইডি কার্ড সঙ্গে রাখার আহ্বান জানান তিনি।