দেশের খবর: দুর্ঘটনা হ্রাস ও নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনটি প্রকল্পসহ মোট ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় অনুমোদিত এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সড়ক নির্মাণ সংক্রান্ত যে তিনটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো ‘নোয়াখালী জেলার সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যানঘাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা সংলগ্ন ‘বীরগঞ্জ-খানসামা-দাড়োয়ানী, খানসামা-রানীবন্দর এবং চিরিবন্দর-আমতলী বাজার জেলা মহাসড়ককে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প এবং মৌলভীবাজারের ‘কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর (জেড-২৮২২) সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে পিসি সেতু (রাজাপুর সেতু) নির্মাণ ও ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্প তিনটিতে মোট ব্যয় হবে ৪১০ কোটি টাকার বেশি।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে সরকার বদ্ধপরিকর। এজন্য প্রায় প্রতি একনেক সভাতেই সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়নের কাজও চলমান আছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে এবং নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপে পর্যটক টানতে সোনাপুর-চেয়ারম্যানঘাট সড়ক উন্নয়ন করা হবে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পর্যটন খাতে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এর পেছনে যে কয়েকটি কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নাজুক যোগাযোগ অবকাঠামো। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তার অংশ হিসেবে নেয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, ভাসানচর এবং স্বর্ণদ্বীপে পর্যটক টানতে সড়ক উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ জন্য ‘সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যানঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১৬৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
হাতিয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নিঝুমদ্বীপ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হওয়ার কারণে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এই সড়ক পথে চলাচল করেন। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নোয়াখালীর কেন্দ্রস্থল সোনাপুর হতে চেয়ারম্যানঘাট হয়ে দ্বীপ এলাকা হাতিয়া, ভাসানচর এবং স্বর্ণদ্বীপে যাওয়ার জন্য দ্রুত ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতকরণ হবে। এছাড়া দুর্ঘটনা কমানো, দ্রুত যান চলাচল, মালামাল পরিবহন বৃদ্ধি এবং প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। মন্ত্রী আরও জানান, দেশের যেসব স্থানে তাঁত শিল্প রয়েছে সেগুলোর জন্য প্রকল্প নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সিলেটের মনিপুর এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাঁত শিল্প বিকাশে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের নিমিত্ত ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প। ডেসকো এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্প। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতায় ৫টি বেসিক সেন্টার, ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং ২টি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পীরগঞ্জ, রংপুর স্থাপন প্রকল্প। এছাড়া সরকারী শিশু পরিবার এবং ছোট মনি নিবাস নির্মাণ/ পুনর্নির্মাণ প্রকল্প, হাইটেক পার্ক, সিলেটের প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প, ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলাধীন পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্প এবং ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।
একনেকে ৬ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকার ৬ প্রকল্প অনুমোদন
পূর্ববর্তী পোস্ট