নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা শহরে সদ্য গজিয়ে ওঠা ট্রাষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতে বেকার যুবক-যুবতীদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রধান অফিস শহরের পলাশপোলস্থ স্পন্দন কালার ল্যাবের পেছনে হাসিনা ভিলার বিশাল ভবনের দ্বিতীয় তলার পুরোটাই ভাড়া করে চাকুরী দেওয়ার নামে এ প্রতারণা চলছে। অফিসের বয়স মাত্র দেড় মাস। এই দেড় মাসেই সাতক্ষীরা জেলায় ৬টি অফিস নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুনীদের বীমা কোম্পানিতে নাম মাত্র চাকুরী দিয়ে লাখ লাখ টাকা লুফে নিচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখায় আসলেই হুলস্থল কর্মযজ্ঞ চলছে সাতক্ষীরা শহরের জোনাল অফিসে। অফিসে ঢুকলেই মনে হলো এটি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। অফিসে শত শত চাকুরী প্রত্যাশীরা হাজির হয়েছে কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে। যাদের অধিকাংশের বয়স ১৪ থেকে ৩০ এর মধ্যে। এরা বেশিরভাগই স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী ও বেকার যুবক-যুবতী। অফিসের কোন কোন কক্ষে চলছে প্রতারনার কৌশল প্রশিক্ষণ। কিভাবে নিকটজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করা যাবে। সাংবাদিকরা অফিসে ঢুকতেই মুহুর্তে খবর পৌছে যায় অফিস প্রাঙ্গণের সব কক্ষে। এ সময় কিছু চাকুরী প্রার্থী ও অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আবার অনেকেই বাথরুমে লুকিয়ে পড়েন সাংবাদিকদের ছবি তোলার হাত থেকে রক্ষা পেতে। এরপর জানা গেল প্রতারণার সব কলা-কৌশল। অফিসের জেইভিপি (জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট) জি,এম আব্দুল গফুর জানান, সাতক্ষীরা শহরের জোনাল অফিসটি চলতি বছরের গত ১ অক্টোবর থেকে ভাড়া নেয়া হয় এবং ১৪ অক্টোবর উদ্বোধন হয়। অফিসটি দুই বছরের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছে। এছাড়া গত ৩০ নভেম্বর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে অফিসটিতে ১৫১ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছে সহস্রাধিকের উপর। ২০১৩ সালে ট্রাষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড লাইসেন্স পায় এবং ২০১৪ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। অফিসটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ওই অনুষ্ঠানে জেলার কিছু প্রভাবশালী নেতাদেরকে অতিথি করে সকলকে চমকে দেওয়া হয়। এতে করে অনেকেই কোম্পানীর উপর আস্থাশীল হয়ে পড়ে। আর এটাকে পুজি করে বেশি প্রচার দিয়ে ফায়দা লুটা শুরু হয়। একটি সূত্র জানায়, জি,এম আব্দুল গফুর অফিসটি নিয়ন্ত্রণ করে। তার অপকর্মেই মূলত এ প্রতারনার জাল বিস্তার হচ্ছে। গফুরের বাড়ী সাতক্ষীরা মুন্সিপাড়ায়। প্রতিদিনই ওই বীমায় যোগ দিচ্ছে শত শত যুবক-যুবতী। অফিসে হাজির হলেই সহজেই মিলছে চাকুরী। নিজের নামে, পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনের নামে বিভিন্ন টাকার অংকের একটি বীমা পলিসি খুললেই চাকুরীর নিয়োগ পত্র দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে সব কঠিন শর্তগুলো গোপন রেখে তাদের নামে বীমা পলিসি করিয়ে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করলেন কয়েকজন কর্মী। কিছু বুঝতে না দিয়েই কৌশলে একটি অঙ্গীকার নামায় নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মীদের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হচ্ছে। কর্মীদের পদ ও পদবী অনুযায়ী সর্বনিম্ন বাৎসরিক তিন হাজার থেকে বিশ হাজার টাকা (বীমা পলিসি করার নামে) গ্রহণ করে মাসিক নির্ধারিত বেতনে চাকুরী দেয়া শুরু করেছে। নিয়োগ কর্মীর বয়স কিছুদিন হলেই পলিসি করার টার্গেট বেধে দেয়া শুরু হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনটি জানালেন এক মাসের বেতন পাওয়া কয়েকজন কর্মী। শুরুতেই নির্ধারিত মাসিক বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে একটি মাত্র পলিসি করার কথা বলে নিয়োগ চূড়ান্ত করে। কর্মীদের মাসিক বেতনের পরিমান সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ও সর্বোচ্চ বিশ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অভিনব প্রতারণা চলছে। কিন্তু কোন বীমা আইনে বীমা কর্মীদের মাসিক নির্দিষ্ট পরিমান বেতন দেয়ার বিধান নেই বলে জানা গেছে। এটি শুধুমাত্র প্রতারনার নতুন এক কৌশল মাত্র। প্রায় দেড় মাসে এই অফিসের সামনের ব্যবসায়ীরা বিপুল সংখ্যক লোকজনের উপস্থিতি তাদেরকে হতবাক করেছে। এখানে আসলে কি হচ্ছে সেটা সবার অজানা। সাতক্ষীরা জোনাল অফিসের এএমডি (এ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর) আব্দুল ওহাব দুলাল জানান, সর্বনিম্ন অষ্টম শ্রেণি পাশ হলে ও একটি বীমা পলিসি করলে এ প্রতিষ্ঠানে যে কেউ চাকুরী করতে পারবে। শহরে বীমা কোম্পানীর ব্যবসা করছেন পৌর সভার ট্রেড লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এটির কোন প্রয়োজন পড়ে না। নির্ধারিত বেতনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একটি কর্মীকে ৩ মাস পর্যবেক্ষনে রাখবো। পরে সে যদি টার্গেট পূরনে ব্যর্থ হয় তাকে চাকুরী থেকে বাদ দেয়া হবে। প্রথমে লোকজনকে আকৃষ্ট করতে ফিক্সড (নির্ধারিত) বেতনের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। চাকুরী গ্রহণকালে টার্গেটের কোন শর্ত নেই, এছাড়া চাকুরী থেকে বাদ দিলে তাদের চাকুরীর নামে গ্রহনকৃত বীমা পলিসির টাকা ফেরত পাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। তার সাথে কথা বলে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। তবে সংবাদটি না প্রকাশ করার জন্য তিনি বার বার অনুরোধ করতে থাকেন। আইআরডিএ (ইন্সুরেন্স ডেভলপমেন্ট রেগুলেটরী অথরিটি) অর্থাৎ বীমা নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আইনের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক বীমা কর্মীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ হওয়ার কথা থাকলেও তার কোন তোয়াক্কা না করেই প্রতারনার মাধ্যমে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি পাশ বা প্রাইমারী গন্ডি পার না হওয়া ছেলে-মেয়েরাও পদ ও পদবী অনুযায়ী নির্ধারিত টাকা জমা দিলে চাকুরী দিচ্ছে। এছাড়া বীমা আইনে কোন কোম্পানীর নির্দিষ্ট বেতন দেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত দেড় মাসে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শত শত বেকার যুবক-যুবতী এই খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সচেতন মহল এই সব প্রতারকদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট