দেশের খবর: দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য জোটের কলেবর বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধান দুই জোটেই আসন বণ্টন নিয়ে দরকষাকষি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হচ্ছে এসব বিষয় নিয়ে।
এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিকরা ২৮০টি আসন দাবি করছে। অন্যদিকে বিএনপির ২০ দলীয় জোটের শরিকরা ২০০ আসন দাবি করছে। এর বাইরে যুক্তফ্রন্টের একটি দল বিএনপির কাছে ১৫০ আসন দাবি করেছে বলেও জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান শরিকের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্যই এবার ছোট দলগুলোও বড় দাবি করে বসেছে বলে মনে করে রাজনীতি সচেতন মহল।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এরই মধ্যে শরিকদের সঙ্গে প্রথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। দুই দিন আগে এরশাদ ও রওশন এরশাদসহ জাতীয় পার্টির নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে নিজেদের প্রত্যাশার কথা বলেছেন। তারা এবার বেশি আসন প্রত্যাশা করছেন। এবার ১০০ আসনসহ নির্বাচনকালীন সরকারে তাদের আরও দুই থেকে তিনজন মন্ত্রী বেশি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে এরশাদ নতুন করে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু ও কাজী ফিরোজ রশীদকে নির্বাচনকালীন সরকারে রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করে দেখবেন এমন কথার পাশাপাশি জোটগত রাজনীতি ও আগামীতে ক্ষমতায় আসা কেন প্রয়োজন সেটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ক্ষমতায় আসতে না পারলে তাদের অবস্থা কেমন হবে, তাও তাদের বোঝানো হয়েছে। বর্তমান সংসদে ৩৪টি আসন নিয়ে জাপা বিরোধী দলের আসনে বসেছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে হিসাব তাতে শরিকদের জন্য ৭০টি আসন বিবেচনা করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিকে ৪০টি আর ১৪ দলের জন্য ১৫ থেকে ২০টি আসন ছাড় দেওয়া হবে। বাকিগুলো আসনভিত্তিক সমঝোতার জন্য রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৫টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) ৩০টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (আম্বিয়া) ১৮টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ২২টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১৫টি, তরিকত ফেডারেশন ৩০টি, ন্যাপ ১০টি, গণতন্ত্রী মজদুর পার্টি দুটি, গণআজাদী লীগ পাঁচটি, বাসদ পাঁচটি ও সাম্যবাদী দল পাঁচটি আসন চাইবে। এদের কেউ কেউ জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের মাধ্যমে জোটপ্রধানকে তালিকাও দিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে গেলে অন্তত ১০০টি আসন দাবি করবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবার আমরা সাতটি আসন পেয়েছিলাম; এবার কমপক্ষে ৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেভাবে আমাদের প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছি।
আসন বণ্টন নিয়ে দরকষাকষি চলছে বিএনপি শিবিরেও। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া করাগারে বন্দি থাকার কারণে তার মুক্তির আন্দোলন সর্বাধিক প্রাধান্য দিলেও দলটির নীতিনির্ধারকরা আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতিও রাখছেন ভেতরে ভেতরে। এ নিয়ে দলটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এর সঙ্গে জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গেও দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের যোগাযোগ হচ্ছে নিয়মিত। জামায়াত প্রশ্নে ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়ায় কিছুটা বাধা সৃষ্টি হলেও নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে দলগুলোর। এরই মধ্যে তাদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
এবার বিএনপির কাছে জোটের শরিক দলগুলোর প্রত্যাশা প্রায় ২০০ আসন। যদিও এ জোটের ১২টি দলের নিবন্ধনই নেই। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত যুক্তফ্রন্টের এক নেতা ১৫০ আসন দাবি করেছেন। এ অবস্থায় বিএনপির নিজেদের কোনো আসন থাকে না। সবাইকে খুশি করে একত্রিত করে রাখা দলটির জন্য একটু চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন অনেকেই।
সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কাছে জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী এবার ৬০টি আসন চায়। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও খেলাফত মজলিস চায় ৩০টি করে আসন। জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ১৫টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১০টি, বিজেপি দুটি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এবং লেবার পার্টি চায় ছয়টি করে আসন, বাংলাদেশ ন্যাপ পাঁচটি, এনডিপি দুটি, জাগপা ও এনপিপি চায় চারটি করে আসন, ডেমোক্রেটিক লীগ ও ন্যাপ চায় (ভাসানী) দুটি করে আসন এবং সাম্যবাদী দল চায় একটি আসন। এছাড়া যুক্তফ্রন্ট বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে গেলে অন্তত ১৫০টি আসন চাইতে পারে বলে জানা গেছে।