দেশের খবর: আসন্ন নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিএনপি যে কূটনৈতিক যোগাযোগ চালাচ্ছে তা মোকাবিলায় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপির বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করলেও একে হালকাভাবে দেখছে না সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের অলআউট কূটনীতি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপির বক্তব্য ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উদ্বেগ ও চাপ মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুসারে, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোয় থাকা বাংলাদেশ মিশন সেসব দেশের সরকারকে ব্রিফ করবে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই ব্রিফিং চলবে নিয়মিত। প্রয়োজনে সেসব দেশে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা যাবেন এবং সরকারগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের দুই সদর দফতর নিউইয়র্ক ও জেনেভায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরতে আলাদা ভাবে কর্মকর্তাকে অ্যাসাইন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ হবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ব্রাসেলস সদর দফতরের ক্ষেত্রেও।
মিশনগুলোর জন্য ড্রাফট ব্রিফিং নোটে উল্লেখ করা হয়েছে, সব বাধা উপেক্ষা করে আগামী জাতীয় নির্বাচন সময়মতো এবং সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সব রাজনৈতিক দল আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে। কোনো রাজনৈতিক দলকে বাধা দেওয়া হবে না। এতে বলা হয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সমাজ রয়েছে। এই সমাজ নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এখানে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
সূত্র মতে, শিগগিরই সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা দিল্লি সফরে যাবেন। তিনি নয়াদিল্লি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে শুধু আলোচনা করবেন না বরং বিভিন্ন থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক আমলা-কূটনীতিকদের সঙ্গেও বৈঠক-আলোচনা করবেন। সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে একাডেমিক আলোচনাও করবেন উপদেষ্টা। পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী দুই সপ্তাহ আগে যে প্রবন্ধ লিখেছেন তা নিয়েও সরকারের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। যদিও ঢাকার কূটনীতিকরা ইতিমধ্যেই আশ্বস্ত হয়েছেন যে, পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর প্রবন্ধের সঙ্গে ভারত সরকারের অবস্থানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও সাবেক একজন হাইকমিশনারের এ ধরনের প্রবন্ধ যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুখরোচক আলোচনার জন্ম দেয় তা ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলে জানানো হবে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিএনপির প্রচারণার বিপরীতে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটিকেও সক্রিয় করা হয়েছে। উপ-কমিটি গত সপ্তাহে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজে এক গোলটেবিলের আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সভায় বেশ কয়েকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত তাদের মতামত তুলে ধরেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, জাতিসংঘের আমন্ত্রণ এবং তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করেছে। দলটি নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে— যা গণতান্ত্রিক আচরণের মধ্যে পড়ে না। এ সময় বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রকৃত ঘটনাগুলো এবং ইতিহাস তুলে ধরতে আহ্বান জানান তিনি।
জানা যায়, এর আগে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে দুই আন্দোলনও কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব রেখেছিল। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্বেগ প্রকাশ হয়। এই দুই আন্দোলন যে বিরোধীদের পরিকল্পিত তা উল্লেখ করে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কিছু ব্রিফিং করা হয়। তখনো শুধু ঢাকায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়া এবং উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়ে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা ব্রিফ করেন। ঢাকার বিশেষ নির্দেশনায় মিশন প্রধানরা নিজ নিজ দেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দেখা করে সেই উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করেন। সরকারের কর্মকর্তারা মনে করেন, এসব বিফিং সরকারের পক্ষে বড় ভূমিকা রেখেছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে শুরু হওয়া তৎপরতা ও কূটনৈতিক প্রচারণা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।