অনলাইন ডেস্ক: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে ভয়ঙ্কর নাশকতার ছক কষেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে দিতে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের তালিকা করে টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা করেছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির।
নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে তারা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে। সারা দেশে প্রশিক্ষিত ক্যাডার ছড়িয়ে দিয়েছে সংগঠনটি।
বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন শিবির নেতাকে বিস্ফোরকসহ গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে অক্টোবর থেকে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী।
তাদের টার্গেটে রয়েছে- সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দফতর, স্পর্শকাতর বিদ্যুৎ স্টেশন ও বঙ্গবন্ধু সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থাপনা।
নির্বাচনের আগে পুলিশের মনোবল ভাঙতে টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা নিয়ে সিনিয়র অফিসারদের একটি তালিকাও প্রস্তুত করেছে ছাত্রশিবির।
তাদের হিটলিস্টে রয়েছে প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আমলার নাম। নাশকতা ও হামলার পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছেন।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রশিবির সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের অপতৎপরতার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।
নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, কোনো সংগঠন বা গোষ্ঠীর নাশকতা মোকাবেলা করার সক্ষমতা পুলিশের আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অস্ত্র ও বিস্ফোরক হামলার প্রশিক্ষণ দিয়ে ছাত্রশিবির ক্যাডারদের সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে।
এরপর বিশেষ অ্যাপসের (প্রটেকটিভ টেক্স, টেলিগ্রাম, ভাইবার ও হোয়াটসআপ) মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ও হামলা-প্রস্তুতির নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। অক্টোবরে মাঠে নামা ও হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে বার্তা আদান-প্রদানের এ তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এসব বিশেষ বার্তায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ওয়ারী থেকে ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শফিউল আলমসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭৫ কেজি বিস্ফোরক, লিফলেট, চাঁদা তোলার (বায়তুল মাল) বই জব্দ করা হয়। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার নেতাকর্মীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব স্বীকার করেছেন। নির্বাচনকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করতে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছেন তারা। একাধিক গোপন বৈঠক করেছেন তারা।
সহিংসতার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা বিস্ফোরক সংগ্রহ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানান, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসেন, দফতর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক খালেদ মাহমুদসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গোপন বৈঠক করেছেন।
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করতে তারা নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা সৃষ্টি করতে ২০১৪ সালে সারা দেশে ব্যাপক নাশকতা চালায় জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা। রাজধানীতে ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে এবং তা প্রচার করে তারা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিল। তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির ব্যাপক নাশকতা চালালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে রাজধানীতে তারা বড় সহিংসতা করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এবার তারা আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকায় সহিংসতার টার্গেট করেছেন।
সাংস্কৃতিক জোট ও গোষ্ঠীর ব্যানারে সংগঠিত হচ্ছে শিবির: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির পরও অত্যন্ত কৌশলে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে ছাত্রশিবির। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, জোট ও গোষ্ঠীর ব্যানারে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। বাসাবাড়িতে গোপন বৈঠকের পাশাপাশি খেলার মাঠে বসেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন: পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির মধ্যেও বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে ছাত্রশিবির। বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন তাদের আর্থিক সহায়তা করছে। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে- ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন (আইআইএফএসও) ও ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ। সংগঠন দুটি বিশ্বব্যাপী কাজ করছে। এছাড়া পাকিস্তানি ইসলামী জামায়াত-এ-তালাবা, মালেশিয়ার মুসলিম ইয়ুথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়া, স্টুডেন্ট ইসলামিক অর্গানাইজেশন অব ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশন, এশিয়া ফেডারেশন অব মুসলিম ইয়ুথ ও ইসলামী ইউওয়া সাং নেপাল আর্থিকভাবে সহায়তা করছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।