নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুল আলোচিত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহবুবুর রহমানকে বদলী করার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ২০তম সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও গতকাল রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহাসীন আলী ওই রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেন। এরআগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষর করেছিলেন গত ১৯ সেপ্টেম্বর।
বিভিন্ন কারণে আলোচিত সমালোচিত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহবুবুর রহমান। সম্প্রতি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাটলিপিকারকে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযানে আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম ও সদস্যবৃন্দ স্বশরীরে প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনও করেন। কিন্তু এক যাদুবলে মাহাবুব অতীতের মতই পার পেয়ে যান। জেলা পরিষদের নির্বাচনের পূর্বেও প্রার্থী হিসেবে মো. নজরুল ইসলাম বিভিন্নস্থানে মাহাবুবকে অপসারণ করার অঙ্গীকারও করেছিলেন। কিন্তু সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মাহাবুব জেলা পরিষদে ছিলেন বহাল তবিয়তে।
এদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বর্তমান নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বের ৫ বছরে জেলা পরিষদের কমপক্ষে সাড়ে ৩ কোটি টাকার কোন হিসাব নেই। বিষয়টি সম্প্রতি নজরে আসার পর তোলপাড় শুরু হয়। আর এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে দুর্নীতিবাজ চক্রটি তৎপর হয়ে উঠেছে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পরিষদের ২১তম সভার নোটিশে ৪নং আলোচ্য সূচি হিসেবে ‘২০১০-২০১১ হতে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর পর্যন্ত এডিপি’র বরাদ্দকৃত অর্থ রাজস্বখাতে ব্যয় এবং এডিপি’র বরাদ্দকৃত অর্থের হিসাব ঘাটতি সংক্রান্ত’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও মাহাবুবের পিতা স. ম আব্দুর রউফ এর নামে প্রতিষ্ঠিত কমপ্লেক্স জেলা পরিষদের টাকায় আর পরিচালিত হবে কি না সেটিও ৩নং আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচিত পরিষদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে পরিষদে ঘটে যাওয়া একটির পর একটি দুর্নীতি অনিয়ম বেরিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে ছড়ি ঘুরিয়েছেন ‘টুয়েন্টি পার্সেন্ট’ নামে পরিচিত মাহবুব। জেলা পরিষদকে জনগণের সেবা কেন্দ্রে পরিণত করতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে জেলা পরিষদ থেকে কোন প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ দেয়া হলে বরাদ্দের ২০ শতাংশ উৎকোচ দিতে হতো মাহবুবকে। নজরুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতিবাজরা এ ২০ শতাংশ উৎকোচ পাচ্ছে না। ঘুষ দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে জেলা পরিষদকে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দিলে গাত্রদাহ শুরু হয় দুর্নীতিবাজদের। তারা শুরু করে ষড়যন্ত্র। নানা কৌশলে জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে থাকে মাহবুব ও তার লোকজন। সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের অর্থায়নে কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে মাহবুবুর রহমান শর্ত জুড়ে দিতেন। শর্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি হতে হবে তার পছন্দের নামে। তার পিতা স.ম আব্দুর রউফের নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে এবং বরাদ্দ থেকে ২০ ভাগ টাকা তাকে দিতে হবে। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললে বরাদ্দের টাকা বন্ধ রাখা হতো। অথবা বরাদ্দ বাতিল করা হতো। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেন নজরুল ইসলাম। জেলা পরিষদকে উন্নয়নের সূতিকাগার হিসেবে গড়ে তোলার দৃপ্ত শপথ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন দুর্বার গতিতে। ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত জেলা পরিষদ গড়তে তিনি বদ্ধপরিকর। জেলা পরিষদের অতীতের কলঙ্ক মোচন করে সাতক্ষীরাবাসির আশা-আকাক্সক্ষার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান হিবেবে গড়ে তুলতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোন ঠাঁই এ পরিষদে নেই বলে জানান তিনি।
অবশেষে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবের বদলীর সিদ্ধান্ত
পূর্ববর্তী পোস্ট