অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তিন দিন ধরে অনশন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থী আকতার হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে ‘ফাঁস হওয়া’ প্রশ্নে নেওয়া ওই পরীক্ষার ফলাফল বাতিল এবং ফের পরীক্ষা নেওয়াসহ চার দফা দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কয়েকশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। একদল শিক্ষার্থী উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়ায় কার্যালয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
তাদের চার দফা দাবি হল- ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল, পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা, বিগত বছরগুলোতে ‘জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে’ ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা।
সরকার সমর্থক ছাত্রলীগও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘যাচাই বাছাই সাপেক্ষে’ পুনরায় পরীক্ষা নেওয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া এখনও মেলেনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনরত আইন বিভাগের ছাত্র আকতারকে দেখতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। আকতারের দাবিকে ‘স্বাগত জানিয়ে’ প্রক্টর গোলাম রাব্বানী বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপর অন্যদের নিয়ে তিনি আকতারকে ডাবের পানি খেয়ে অনশন ভাঙার অনুরোধ করতে থাকনে। আকতার তাতে রাজি না হলেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যান৷ এক পর্যায়ে আকতার হাত পা ছোড়াছুড়ি আর চিৎকার শুরু করেন৷ তখন কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে হাত থেকে স্যালাইনের ক্যানেলা খুলে তাকে রিকশায় তোলেন।
রিকশায় তোলার পরও আকতার চিৎকার করতে থাকেন। ওই অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। প্রক্টর এবং অন্য শিক্ষকরাও তার সঙ্গে যান।
এর আগে বেলা সোয়া ১টার দিকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এ বিষয়ে সংগঠনের অবস্থান জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। সেখানে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
১. যাচাই বাছাই সাপেক্ষে পরীক্ষা পুনরায় নেওয়া অথবা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশেষ ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে স্পষ্ট প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আসা।
২. ডিজিটাল জালিয়াতি বা প্রশ্নফাঁস বা যে কোন ধরনের অসদুপায় অবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
৩. স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে জালিয়াতি, প্রশ্নফাঁস বা অসদুপায়ের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
৪. আধুনিক, যুগোপযোগী ও মানসম্মত ভর্তি পরীক্ষার স্বার্থে শিক্ষাবিদ, সিনেট, সিন্ডিকেট, অংশীজন এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পলিসি ডিবেটের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করা।
গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ১৪টি ছবি এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে আসে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্তের পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও গত মঙ্গলবার ফল প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় ‘ঘ’ ইউনিটের প্রথম ১০০ জনের তালিকায় থাকা অন্তত ৭০ জন ভর্তিচ্ছু অন্য ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণই হতে পারেননি।
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আকতার হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেন। তার অবস্থার অবনতি হলে সেখানেই তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়।
সূর্যের তাপ থেকে আকতারকে বাঁচাতে সহপাঠীরা বৃহস্পতিবার সেখানে শামিয়ানা টানিয়ে দেন। তার শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করে ফলাফল বাতিলসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেন।
এরপর শিক্ষার্থীদের একটি অংশ উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। কর্তৃপক্ষ তখন কার্যালয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কয়েকশ শিক্ষার্থী বেলা ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসে।
সেখান থেকে ‘প্রশ্নফাঁস প্রশ্নফাঁস, মেধাবীদের গলায় ফাঁস’ স্লোগান তুলে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। পরে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হন।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসনের ছাত্র বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, “যদি আজকের মধ্যে এই পরীক্ষার ফলাফল বাতিল না করা হয় তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব। কেন, কেন, কেন প্রতিটি নায্য দাবি নিয়ে ছাত্র সমাজকে মাঠে নামতে হয়? ধিক্কার জানাই আপনাদের এই নির্লজ্জতাকে। আমরা চাই, আপনাদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে তুরষ্কে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।