রাজনীতির খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে জোটের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাছে জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ঢাকা দূতাবাসের রাজনৈতিক অফিসার উইলিয়াম মুলার বৃহস্পতিবার বিকালে জোটের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তরপর্বে জোটের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে এ প্রশ্ন করেন। জবাবে কামাল হোসেন সরাসরি জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা নির্বাচিত সংসদ ঠিক করবে। এরপর মুলার তাকে আরও তিনটি প্রশ্ন করেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় রাজধানীর বনানীর হোটেল লেকশোরে প্রায় ২৫টি দেশের ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য শরিক হিসেবে আছে। জোটের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন ফ্রন্টের সাত দফা ও ১১ দফা লক্ষ্য কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে পাঠ করেন। এরপর বর্তমান গণতন্ত্র, সরকার, নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভূমিকা বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৈঠকসূত্র জানায়, ড. কামাল হোসেন বক্তব্য দেওয়ার পরই কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন করতে শুরু করেন। ড. কামাল সব প্রশ্নের উত্তর দেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, নির্বাচনে বিজয়ী হলে ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? উত্তরে ড. কামাল বলেন, ‘এটা সংসদের বিষয়। নির্বাচিত সংসদই ঠিক করবে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।’
এরপর উইলিয়াম মুলার আবার প্রশ্ন করেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান শেখ হাসিনার বিপরীতে লিডার ( নেতা) কে হবেন? বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও কারাগারে আছেন। সেক্ষেত্রে নেতৃত্ব সংকট কীভাবে পূরণ হবে? জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এখানে একক নেতৃত্ব নেই। যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা আবারও জানতে চান, জামায়াত বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর দলের যে অবস্থান, সে প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট কী ভাবছে। এর কোনও উত্তর দেননি ড. কামাল হোসেন। বি চৌধুরী কেন ঐক্যে নেই, পাল্টা প্রশ্নে সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি এখনও আশা করেন বি চৌধুরী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের অন্যতম নেতা, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘মতবিনিময় অনুষ্ঠান খুব ভালো হয়েছে। ২৫-৩০ জন কূটনীতিক ছিলেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘কূটনীতিকরা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন আমরা কেমন আশাবাদী। আমরা তাদের বলেছি, আশাবাদী। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির প্রশ্ন ছিল, নেতা কে হবেন। আমরা সরাসরি উত্তর দিইনি। বলেছি, ক্রমান্বয়ে ঠিক করবো।’
বৈঠকসূত্র জানায়, মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নরওয়ের প্রতিনিধি প্রশ্ন করেন, সরকার জোটের দাবি না মানলে পরবর্তী কী সিদ্ধান্ত আসবে।
ড. কামাল এর জবাবে বলেন, ‘সরকার দাবি না মানলে আমরা মানুষের কাছে যাবো। ইতোমধ্যে আমাদের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, মানুষের চাওয়াকে সম্মান জানাবে।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তাও প্রশ্ন করেছেন অনুষ্ঠানে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, কাতার, মরক্কোসহ ৩০ টি দেশের কুটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। সংখ্যার হিসেবে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রায় ১৩০ জন অংশগ্রহণ করেন।
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আমরা শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনার-কূটনীতিকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় করেছি। আমাদের শীর্ষ নেতা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল হোসেন ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের প্রশ্নের জবাবও তিনি দিয়েছেন।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এসএস আকবর, শহীদুল্লাহ কায়সার, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অংশ নেন।
বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আবদুল মান্নান, শাহজাহান ওমর, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, মীর নাসির, শাহিদা রফিক, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়াল, মীর হেলাল উপস্থিত ছিলেন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে।