জার্মানির সাবেক নার্স নিয়েটস হোগে (জার্মান উচ্চারণে) ছয়জন রোগী হত্যার দায়ে জেল খাটছেন। কিন্তু এখন সন্দেহ বাড়ছে তিনি এর চেয়েও বেশি খুন করেছেন। তবে তা একটি-দুটি বা চার-পাঁচটির বেশি নয়, তিনি ১০০ জনকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে আজ মঙ্গলবার থেকে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। তবে ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তারা মনে করছেন, তিনি ২০০–এর বেশি খুন করে থাকতে পারেন।
জার্মান এই লোকের বয়স ৪২ বছর। তিনি দেশটির উত্তরে উপকূলীয় শহর ভিলহেমসাফনে জন্ম নেন। বাবাও ছিলেন নার্স। বাবার মতো ১৯ বছর বয়সে হোগে নার্স পেশায় প্রবেশ করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি জার্মানির ওডেনবার্গের একটি প্রধান হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে তিনি পাশের ডেমেনহোর্স্ট জেলায় বদলি হন।
এক কন্যার বাবা হোগেকে সাবেক সহকর্মীরা পরিশ্রমী ও পছন্দসই ব্যক্তি হিসেবেই মনে করতেন। কিন্তু তাঁরা হঠাৎ লক্ষ করা শুরু করেন, হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে (আইসিইউ) হোগের তত্ত্বাবধানে থাকা বেশ কয়েক জন রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে ‘সমস্যা’ রয়েছে। ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে মৃত্যু পথযাত্রী বেশির ভাগ বয়স্ক রোগীদের ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ডোজ প্রয়োগ করে তিনি মৃত্যু ত্বরান্বিত করতেন। ২০০৫ সালে তিনি হাতেনাতে ধরা পড়েন।
হোগের ব্যাপারে মনোচিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি (হোগে) নারসিসসিসটিক ডিজঅর্ডারে ভুগছেন। নারসিসসিসটিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার (এনপিডি) একটি ব্যক্তিত্ব–সংক্রান্ত অসুস্থতা। এ সমস্যায় ভোগা মানুষের মধ্য দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। তাঁরা নিজেদের বেশি গুরুত্ব দেন। বেশি বেশি প্রশংসা প্রাপ্তির চাহিদা থাকে তাঁদের। সেই সঙ্গে তাঁদের মধ্যে সহানুভূতিরও অভাব দেখা যায়।
১০০ জনেরও বেশি রোগীকে হত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে হোগেকে। তবে হোগে ৩০ জনের মতো রোগী হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, হোগের হাতে হত্যার শিকার রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি প্রকৃতভাবে কতজনকে হত্যা করেছেন, সে সংখ্যা কখনো জানা সম্ভব হবে না, কারণ আরও যেসব রোগীকে মৃত্যুর আগেই হোগে মেরে ফেলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের অনেককে ময়নাতদন্ত ছাড়াই সমাহিত করা হয়েছে।
ওডেনবার্গে অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের সহায়তাকারী সংগঠন ভাইসা রিং এর পেত্রা ক্লাইন বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারি না , যাঁদের হোগে হত্যা করেছেন, তাঁদের সবার কথা মনে করতে পারেন তিনি। এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা।’
হোগের তত্ত্বাবধানে এত রোগীর সন্দেহজনক মৃত্যুর কারণে ২০০২ সালের শেষ দিকে ওডেনবার্গের ওই হাসপাতাল তাঁকে চাকরিচ্যুত করে। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে কোনো তদন্ত করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ডেমেনহোর্স্টে হোগের হাতে এমন মৃত্যুর শিকার এক ব্যক্তির নাতি ক্রিস্টিয়ান মারবাখ বলেন, ‘তারা (হাসপাতাল) ওই ভুল না করলে নিয়েটস হোগের এমন হত্যা হয়তো বন্ধ করা যেত।’
এদিকে বিচারে হোগের সহকর্মীদের সাক্ষী দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে। মারবাখের আশা, কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হোগে হয়তো ‘সব সত্য প্রকাশ’ করবেন।
পুলিশের কাছে ডেমেনহোর্স্ট হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুসারে, রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় হোগে ডিউটিতে ছিলেন।
পুরো ঘটনায় একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি ফুটে উঠলেও শুধু ২০০৮ সালের ঘটনা নিয়ে বিচার শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। ওই সময়ে মারা যাওয়া কয়েকজন ব্যক্তির স্বজনদের চাপের মুখে আটটি মরদেহ সমাধি থেকে তোলা হয়।তথ্যসূত্র: বিবিসি