অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের জামদানি বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে। আর এই অজর্নের পেছনে শত শত বছর ধরে কাজ করছে রূপগঞ্জের জামদানিশিল্পীরা। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা ধরে রেখেছে এ ঐতিহ্য। পাতা, আটপাইড়, জালা তেরসি, দুবলা, দাদুর শাড়ি, আঙুল তেরসিসহ নানা ধরনের নকশার জামদানি তৈরি করছে এখানকার নারী-পুরুষ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকায় জামদানিপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, গানের তালে তালে জামদানির জমিনে ফুল তুলছে সোহেল, সাদিয়ার মতো কর্মীরা।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের এই এলাকা থেকেই একসময় জামদানি শাড়ি তৈরি শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার এখানে একটি জামদানিপল্লী গড়ে তোলে। এই জামদানিপল্লীতে ৪১৯টি প্লট রয়েছে। এসব প্লটে জামদানি তৈরি হয়। চার হাজার শ্রমিক দুই হাজার তাঁতে সপ্তাহে ৫০০ থেকে ৬০০টি জামদানি শাড়ি তৈরি করে। এসব শাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির পাশাপাশি ভারতসহ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
জামদানিশিল্পী সোহেলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের চোরাপল্লী। সোহেল বলল, ‘আমাদের খুব অভাব। এ জন্য এখানে এসে জামদানি শাড়ি তৈরি করছি।’ তাঁতের মহাজন ইউনুসের ঘরে নিপুণ হাতে আঙুল তেরসি নকশার জামদানি তৈরি করছিল সাদিয়া। তার বাড়ি নরসিংদী। সে চার বছর ধরে জামদানি তৈরির কাজ করছে। সাদিয়া বলল, ‘আমি শাড়ি তৈরি করে সপ্তাহে এক হাজার ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। তাতেই আমাদের সংসার চলে।’ বাজিতপুর উপজেলার মিরাকান্দি গ্রামের অমিত হোসেন দুই বছর ধরে জামদানি তৈরির কাজ করছে। সে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাবলু মিয়ার ঘরে বাহারি জামদানি তৈরির সময় কথা হয় অমিত হোসেনের সঙ্গে। সে বলল, ‘আমি অনেক দামি জামদানি তৈরি করি। একটি জামদানি তৈরিতে দুজনের প্রায় এক মাস লেগে যায়। তাতে পারিশ্রমিক পাই আট হাজার টাকা।’ মহাজন বাবলু মিয়া বললেন, ‘এই জামদানি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। খুব মন দিয়ে এই শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।’
অমিত হোসেনের মতো কিশোরগঞ্জের আরমান, জুয়েল, স্নিগ্ধা, খোকনসহ কয়েক শ শ্রমিক জামদানিপল্লীতে কাজ করছে। কথা হয় জামদানি শাড়ির প্রবীণ ব্যবসায়ী হাজি আজগর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানকার শ্রমিকরা উন্নতমানের জামদানি তৈরি করতে পারে। তাদের হাতে ধরে জামদানির কাজ শেখানো হয়। যে কারণে তারা তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফুল জামদানির ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে পারে।’