বিদেশের খবর: ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি উত্তর প্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যায় রামমন্দির বানাবেই। এ বিষয়ে তারা মরিয়া। কিন্তু সেখানকার চাষীরা মন্দির নয়, দু বেলা পেট পুরে খেতে চান। এটাই তাদের প্রাণের দাবি। ‘দিল্লি চলো’ ডাকে সাড়া দিয়ে শুক্রবার দিল্লির সংসদ মার্গ চত্বরে সমবেত হয়েছিলেন হাজারো দরিদ্র কৃষক। রামলীলা ময়দান-আনন্দ বিহার-নিজামুদ্দিন-সহ কয়েক জায়গায় রাত কাটিয়ে সকাল ১০টায় শুরু হয় ‘কিষান মুক্তি মার্চ’। তাদের চাই ঋণ মওকুফ আর জমিতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম।
উত্তর প্রদেশের বুন্দেলখণ্ডের চাষী শ্রীরাম পাঞ্চাল। অযোধ্যায় রামমন্দির নিয়ে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই। তিনি বলেন, হোক না মন্দির। কিন্তু মন্দিরে পুজো করতে যাওয়ার জন্য তো পেটে রুটি চাই, পকেটে পয়সা চাই! সেটা কোথায়? গমের খেতে তো জলই নেই!’
আরেক কৃষক মনমোহন কুশওয়াহা বললেন, প্রতি বছর চাষ হয় নাকি? যে বছর জল মেলে, সে বছর হয়। না হলে অন্যের জমিতে গতর খাটাতে হয়। তবে ডাল-রুটি জোটে।
রামমন্দির প্রশ্নে মাথায় হাত ঠেকিয়ে কুশওয়াহা বললেন, টাকা থাকলে আমার ঘরেও মন্দির বানাতাম।
শুক্রবার দিল্লির সমাবেশে গোটা দেশ থেকে এসেছিল পঁয়ত্রিশ হাজার কৃষক। তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল দিল্লিবাসী। আলিগড়ের ডাক্তাররা চিকিৎসা করেছেন। কোথাও আইনজীবীরা ব্যবস্থা করেছেন খাবার ও পানির।বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রগতি ময়দানে কাজ করতে আসা শ্রমিকরাও সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন।
কৃষকদের প্রধান দাবি ছিল, চাষের খরচের দেড় গুণ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) আর ঋণ মওকুফ।
সমাবেশে আসা উত্তর প্রদেশের পিলভিটের আখচাষি বিক্কর সিংহের ঋণের পরিমাণ ৭ লক্ষ টাকা। এত টাকা ঋণের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, চিনিকলগুলি আখ কিনে তিন বছর পরে দাম দেয়। সেজন্যই ধার করতে হয়।
এদিকে রামমন্দিরের দাবিতে শনিবার থেকে দিল্লিতে রথযাত্রা শুরু করছে উগ্রপন্থি হিন্দু দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)। এ নিয়ে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই ওই অঞ্চলের চাষীদের। তাদের ভাষ্য, মন্দির দেখিয়ে আর বোকা বানানো যাবে না আমাদের।
দীর্ঘ পথ হেঁটে এই সমাবেশে এসেছেন তেলঙ্গানা রাজ্যের কবিতা। তিন বছর আগে দেনায় ডুবে আত্মহত্যা করেছেন তার স্বামী কাসাইয়। তাই এখন রামমন্দির নয়, পেটে ভাতই একমাত্র চিন্তা কবিতার।
সূত্র: আনন্দবাজার