দেশের খবর: নির্বাচনের সময় আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের গোপন এজেন্ডা থাকে দাবি করে তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সতর্ক থাকতে বলেছে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট। একইসঙ্গে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিভিন্ন অভিযোগ করে ‘ব্লেইম গেইমের’ মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বলে ইসিকে জানিয়েছে এই জোট।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে জোটের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিব কাজী হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করে জোটের পক্ষ থেকে এসব সতর্কবার্তা দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর এ সংক্রান্ত লিখিত দাবিগুলো সচিবের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।
সাক্ষাৎ শেষে দিলীপ বড়ূয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদেশি যেসব পর্যবেক্ষক আসবেন, বিভিন্ন সময় দেখা যায় তাদের কতগুলো গোপন এজেন্ডা থাকে। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ইনডিসগাইড (ভিন্নখাতে) হয়ে যাতে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে সে ব্যাপারে কমিশন সতর্ক থাকবে।’
১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সিইসি বরাবর লিখিত পত্রে পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে আরও বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশিয় পর্যবেক্ষকরে পাশাপাশি বিদেশি পর্যবেক্ষক টিম থাকে। দেশিয় পর্যবেক্ষক হিসেবে বিভিন্ন এনজিও ও বেসরকারি সংস্থা কাজ করে থাকে। এদের মধ্যে কিছু এনজিও বা সংস্থার অর্থায়ন এবং তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা পূর্বনির্ধারিত মনোভাব নিয়ে মন্তব্য করে থাকে, যেটা পক্ষপাতমূলক। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অনেকে আগে থেকে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসে, অনেকে পরিচয় গোপন করে পর্যবেক্ষক হিসেবে এসে বিভিন্ন তথ্য বা সংবাদ সংগ্রহ করে থাকে। যেগুলো নির্বাচন বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ এতে আরও বলা হয়, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনগড়া ও বাড়াবাড়ি রকমের পক্ষপাতমূলক মন্তব্য করে যা আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এই বিষয়গুলো রোধ করার জন্য কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করি।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি বিভিন্ন ‘ব্লেইম গেইম’ খেলছে বলে দাবি করে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, কিছুদিন আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ৬টি অভিযোগ করেছেন এবং বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। তাদের এসব অভিযোগ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিপন্থী। অভিযোগের নামে তারা ব্লেইম গেইম খেলছেন। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ হলেও তারা যাতে কিছু কথা বলতে পারেন, সেজন্য আগে থেকেই এসব ব্লেইম গেইম শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ইসিকে প্রতিপক্ষ করে তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়। বাগাড়ম্বর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের জন্য ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
১৪ দলীয় জোটের এই নেতা আরও বলেন, নির্বাচনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দেশে ও বিদেশে এ ধরনের নানা পরিকল্পনা চলছে। নির্বাচনের আগে অন্তর্ঘাত ও নাশকতামূলক কাজ করতে পারে এই জোট। যাদের মূল নিয়ামক শক্তি জামায়াত। নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার মধ্য দিয়ে তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। এসব ঠেকাতে ইসিকে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগামী ১৩ তারিখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয় উত্থাপন করবে বলে সচিব তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আবদুর রহমান, ডা. শাহাদাত হোসেন, এজাজ আহাম্মদ মুক্তা, এস কে সিকদার, নাদের চৌধুরী প্রমুখ।