দেশের খবর: নবনীতা সাহা। একটি ফ্যাশন হাউস পরিচালনা করেন যশোর শহরে। তিনজন খণ্ডকালীন সহযোগী রয়েছেন তার এ হাউসে। সহযোগীদের সবাই শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী এবং মেস বাড়ির বাসিন্দা। এদিকে নির্বাচনের কারণে মেস বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান চালু রাখার স্বার্থে নবনীতা ওই তিন ছাত্রীকে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছেন।
দেশের আরও কয়েকটি শহরে শিক্ষার্থীদের মেস বন্ধে পুলিশের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। মেসের বাসিন্দা এবং মালিকরা জানিয়েছেন, সাদা পোশাকে পুলিশ তাদের কাছে গিয়েছিল। ২০ ডিসেম্বরের পর মেস ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। নিষেধ করা হয়েছে ভোটের আগে শহরে ফিরতে।
ভোটের সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ মেসে থেকে খণ্ডকালীন কাজ বা চাকরি করেন। অনেকে বন্ধের সময় মেসে থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। নির্বাচনে আগে মেস ছাড়ার ‘পুলিশি নির্দেশে’ তারা বিপাকে পড়েছেন।
বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ (বিএম) সংলগ্ন সোবহান মিয়ার পোল এলাকায় অসংখ্য মেস রয়েছে। এসব মেসের বাসিন্দারা নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। ওই এলাকার নাসির ভিলার একটি মেসে থাকেন বিএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মিঠুন। এই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তিনিসহ ৪০ জনের মতো ছাত্র ছিলেন মেসে। মেস মালিক তাদের জানিয়েছেন, পুলিশ কয়েকবার মেসে তল্লাশি চালিয়েছে। মেসবাসীরা কোন দলের সমর্থক তা যাচাই করতে সবার ব্যক্তিগত ফোনের মেসেজ, ভিডিও ও ছবি খতিয়ে দেখেছে। তাদের ভোটের আগে মেস ছেড়ে যেতেও বলা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়ার পর তাদের বেশিরভাগই এলাকা ত্যাগ করেছেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম অজিয়র রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা তারা দেননি এবং পুলিশ এ ধরনের কোনো কাজও করছে না। তবে তিনি বলেন, পুলিশের সব কাজ নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থেও তাদের অনেক কার্যক্রম রয়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহেও শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিল বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের অনেকেই কুষ্টিয়ার শেখপাড়া এলাকা এবং ঝিনাদহের শহরের মেসগুলোতে থাকেন। সেখান থেকেই নিয়মিত ক্লাসে অংশ নেন। শনিবার তার বিভাগের অনার্সের চতুর্থ বর্ষের ক্লাস নিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পাননি তিনি। অন্য শিক্ষার্থীরাও তাকে বলেছে, আজকের (শনিবার) পর তাদের পক্ষেও ক্লাসে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ তাদের মেসে র্যাব ও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। দু’জন ছাত্রকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদেরও মেস ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়েছে।
ফারহা তানজীম জানান, পরিসংখ্যান বিভাগের আরেক সহকর্মী শিক্ষকও তাকে একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তার ক্লাসেও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। ফারহা বলেন, যিনি যে এলাকার ভোটার, তিনি সেখানে ভোট দিতে যাবেন। তবে কাউকে বাধ্য করা কোনোভাবেই প্রশাসনের কাজ হতে পারে না। এর ফলে ভোট নিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হবে বলেও তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন জানান, এ ধরনের সংবাদ তার জানা নেই। সারাদিন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে জানান তিনি।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আবুল কালাম আজাদ জানান, শহরের খোরকি এলাকায় মেসে থাকেন তিনি। ওই মেসে অন্তত ৩০-৩৫ জন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকেন। কিন্তু এখন সবাই বাড়ি চলে গেছেন। কারণ সাদা পোশাকের পুলিশ এসে ২০ ডিসেম্বরের পরে মেসগুলো খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। মেস মালিকরাও ছাত্রদের ভোটের আগে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেক ছাত্র এনামুল হক। তিনি থাকেন শহরের ধানসিঁড়ি ছাত্রাবাসে। ওই ছাত্রাবাসের ৪০ শিক্ষার্থীর সবাই বাড়ি চলে গেছেন বলে জানান তিনি।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন জানিয়েছেন, নির্বাচনে নাশকতার আশঙ্কা থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যশোর শহরের মেস মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, যাতে নির্বাচনের সময় মেসে কোনো নাশকতাকারী বা দুস্কৃতকারী আশ্রয় নিতে না পারে।