খেলার খবর: ভক্ত-সমর্থকদের চোখের মনি, প্রিয় ক্রিকেটার, অধিনায়ক আর কোটি বাঙালির প্রিয় মুখ মাশরাফি বিন মর্তুজা এখন নির্বাচনের মাঠে। ক্রিকেট মাঠ ছেড়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত।
অগণিত মাশরাফি ভক্ত তাদের পছন্দের ক্রিকেটার, অধিনায়ক ও প্রিয়মুখকে জাতীয় সংসদে দেখতে উন্মুখ হয়ে আছেন । মাশরাফির প্রচার, পথ সভা ও অন্যান্য কার্যক্রমে জনতার ঢল এবং নড়াইলবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ-নড়াইল এক্সপ্রেসের বিপুল বিজয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
কিন্তু ক্রিকেট ভক্ত ও অনুরাগীরা চিন্তিত ক্রিকেটার আর অধিনায়ক মাশরাফিকে মাঠে দেখা নিয়ে। এটুকু শুনে আবার ভাববেন, সে চিন্তা-সংশয় বুঝি ক্রিকেটার-অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে। মানে মাশরাফি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মাঠে ফিরবেন কি-না? বা খেলা চালিয়ে যাবেন কি-না, তা নিয়ে।
না না, সেটা নয়। মাশরাফি সংসদ সদস্য কেন, মন্ত্রী হলেও খুব শিগগিরই মাঠ থেকে বিদায় নিবেন না। ক্রিকেটের সাথে থাকবেন , আন্তর্জাতিক না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন আরও কয়েক বছর। আসল সংশয় অন্য জায়গায়- মানে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা এবং বিদায় নিয়ে।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশের মাটিতে তার আদৌ আর ওয়ানডে খেলা হবে কি-না? ঘুরিয়ে বললে মাশরাফি বিন মর্তুজা ঘরের মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন কি-না বা আদৌ জানানোর সুযোগ পাবেন কি-না, লাল সবুজ জার্সি গায়ে চেপে ঢাকা, ফতুল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা কিংবা সিলেটের কোথাও আর মাশরাফির দেখা মিলবে কি-না? তা নিয়ে রাজ্যের সংশয়-সন্দেহ সবার মনে।
এ সংশয় ভেঙে দিতে পারতেন মাশরাফি নিজেই। কিন্তু টাইগার ওয়ানডে ক্যাপ্টেন তার অবসরে যাওয়া, ক্রিকেটকে বিদায় জানানো এবং সেটা দেশে না বিদেশে-তা পরিষ্কার করেননি।
মোটা দাগে বলতে গেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের বিষয়ে এখন পর্যন্ত হ্যাঁ-না কিছুই বলেননি। বলছেনও না। বার বার বলেছেন, বিশ্বকাপের আগে ওসব নিয়ে কোন কথা নয়। বিশ্বকাপ শেষে অবসর বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো নিয়ে কথা বলা যাবে।
মাঝে একটা কথা প্রায় চাউর হয়ে গিয়েছিল, বিশ্বকাপের পর পরই হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন মাশরাফি। মাঝে তার কথা বার্তায় কিছু আভাস-ইঙ্গিতও ছিল।
পরে মানে নির্বাচনে দাঁড়াবার পর প্রেসের সামনে মাশরাফি অবশ্য একটি নতুন কথাও বলেছেন, তা হলো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে। সম্ভাবনাও আছে। কাজেই এখনই বলা যাবে না, কবে কখন কোথায় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি।
অনেক হিসেব নিকেশ থেকেই অনুমান করা হয়েছিল, ১৭ ডিসেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটি দেশের মাটিতে জাতীয় দলের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাশরাফির শেষবার মাঠে নামা। ওই ম্যাচের পর জনাকীর্ণ সংবাদ সন্মেলনে প্রশ্ন উঠেওছিল-এ ম্যাচটিই কি ঘরের মাঠে আপনার শেষ ম্যাচ?
মাশরাফি জবাবে বলেছেন, ‘সিলেটে ম্যাচটি আমার শেষ ম্যাচ হতেও পারে, নাও হতে পারে। আমি হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। দেখা গেছে বিশ্বকাপের সময় কোন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। আবার হয়তোবা দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত রিভিউ করতেও পারি। নাও পারি। তখনই জানবেন। এ নিয়ে প্যানিকড হবার কিছু নেই।’
মাশরাফি পরিষ্কার কিছু না বললেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তার ঘরের মাঠ থেকে অবসরে যাবার সম্ভাবনা কম। কারণ আইসিসির এফটিপি (ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম) জানাচ্ছে, আগামী বছর মানে ২০১৯ সালে দেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোন ওয়ানডে ম্যাচই নেই। যেমন ছিল না ২০১৭ সালেও। গত বছর এমন হয়েছিল। সারা বছর দেশের বাইরে ১৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেও একটি ম্যাচও দেশের মাটিতে খেলতে পারেননি মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহরা।
সবাই এরই মধ্যে জেনে গেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ শেষে আগামী ১০ মাস ঘরের মাঠে খেলা নেই টাইগারদের। ২০১৯ সালের মে-জুনে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরলেও ঘরের মাঠে খেলার জন্য অনেকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে তাদের; সেটা টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি তিন ফরমেটেই।
আগামী বছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আসার কথা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। মাসের ৭ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে হবে এই তিন ম্যাচ। একই মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে আফগানিস্তানেরও। তবে কোনোটিরই চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।
পরে নভেম্বরে দুই টেস্ট ও তিন টি-টোয়েন্টি খেলতে ভারতে যাবে বাংলাদেশ দল। সে সফর শেষ করে শ্রীলঙ্কার মাটিতে হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। যার মানে দাঁড়ায় ২০১৯ সালে ঘোষিত ফিউচার ট্যুর প্ল্যান অনুযায়ী ঘরের মাঠে কোনো ওয়ানডে নেই টিম টাইগারদের। ঘরের মাঠে হবেই সাকুল্যে দুটি সিরিজ।
সবচেয়ে বড় কথা, এফটিপিতে দেশের মাটিতে কোন একদিনের মানে ৫০ ওভারের ম্যাচ নেই। মাশরাফি যেহেতু ওয়ানডে ছাড়া আর অন্য দুই ফরম্যাটে জাতীয় দলে খেলেন না, তাই তার খেলার সুযোগও নেই। আর যেহেতু খেলার সুযোগ নেই, তাই মাশরাফির আর লাল সবুজ জার্সি গায়ে দেশের মাটিতে মাঠে নামার সম্ভাবনা নেই।
সে কারণেই বলা, হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটিই ছিল দেশের মাটিতে নড়াইল এক্সপ্রেসের শেষ ওয়ানডে সিরিজ। আর ১৪ ডিসেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে ও সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটিই ছিল দেশে মাশরাফির শেষ ওয়ানডে।
তবে বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পের মত মাশরাফি উপাখ্যান হয়তো শেষ হয়েও হবে না। বিসিবি অবশ্যই চাইবে এমন এক বড় ক্রিকেটার এবং দেশীয় ক্রিকেটের সব সময়ের সেরা ও সফল অধিনায়ক মাশরাফিকে দেশের মাটিতে ঘটা করে বিদায় জানাতে। সেই ঘটা করে বিদায় জানানোর সর্বোত্তম জায়গাই হতে পারে দেশের মাটি এবং হোম অফ ক্রিকেট শেরে বাংলায়। এখন হয়তো বলবেন, ঘরের মাটিতে তো ওয়ানডেই নেই, তাহলে দেশে অবসর নেবেন কি করে?
হ্যাঁ, সত্য। এফটিপিতে আগামী বছর মানে ২০১৯ সালে দেশের মাটিতে কোন ওয়ানডে নেই। সেটা আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। আইসিসির এফটিপিই শেষ, এর বাইরে আর কোন ম্যাচ খেলা যাবে না, আর কোন সিরিজ আয়োজন বা বিদেশ সফর করা যাবে না- এমন কথা কোথাও বলা নেই। লিখাও নেই। এমন নিয়ম-নীতি ও রীতিও নেই। এফটিপির বাইরে দুই দেশ বা তিন দেশ মিলে পারস্পরিক কথা বার্তা ও সমঝোতার প্রেক্ষিতে ইচ্ছে করলে কোন সিরিজ বা তিন জাতি-চার জাতি আসর (অবশ্য অন্য দলগুলো সময় করে উঠতে পারলে বা তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে) আয়োজন বা সফর করা সম্ভব।
যেহেতু আগামী বছর বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের আর কোন ওয়ানডে নেই, তাই বিসিবি অন্য কোন টেস্ট খেলিয়ে দলের সাথে কথা বলে মাশরাফির বিদায়কে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখতে কোন সিরিজ বা ওয়ানডে আসর আয়োজন করলেই কেবল দেশের মাটিতে খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারবেন মাশরাফি। না হয়, বিশ্বকাপই হয়তো শেষ। আর দেশেও লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নামা হবে না এ কালজয়ী ক্রিকেটারের।