নিজস্ব প্রতিবেদক :
শ্যামনগরে আইন অমান্য করে পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে খুন জখমের হুমকি, মিথ্যা মামলা দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগ করে শ্যামনগর উপজেলার ফুলতলা গ্রামের জি এম নুর নবীর কন্যা কলেজ শিক্ষিকা নাসরীন বানু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার পিতা উপ-মহা হিসাব রক্ষক (পদ্ধতি) পদে কর্মরত অবস্থায় অবসর গ্রহণ করে স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করেন। বর্তমানে তিনি শারিরীকভাবে মারাত্মক অসুস্থ্য। আমি শ্যামনগর আতরজান মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছি। শ্যামনগর থানার পরানপুর মৌজায় জে এল নং- ৭৪, খতিয়ান নং- ৪৬০, দাগ নং- ৭৩২, ৭৩৩, ৭৩৪, জমির পরিমান ১০.৭১ একর জমি পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত হন আমার পিতা। সে অনুযায়ী আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছি। উক্ত সম্পত্তি আমার পিতা আমার ভাই জি এম নুরে রাজ্জাক ও আমার(নাসরিন বানু) নামে হেবানামা করে দেন। আমার ভাই ঢাকায় থাকার কারণে ওই সম্পত্তি পুরোটাই আমি দেখাশোনা করি। হেবানামা সূত্রে উক্ত সম্পত্তি আমি মিউটেশন ও খাজনা দাখিলাও সম্পন্ন করে ভোগদখলে আছি। আমার স্বামী আমার সাথে থাকে না। আমার ২টি সন্তান নিয়ে শ্যামনগরের ফুলতলায় বসবাস করি। যে কারণে উক্ত সম্পত্তি দেখাশোনা করার মত আমি ছাড়া আরও কেউ নেই। আমি মহিলা মানুষ হওয়ার সুবাদে স্থানীয় সন্ত্রাসী প্রকৃতির ব্যক্তিরা উক্ত সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের পায়তারা শুরু করে। যার নেতৃত্বে রয়েছে ভেটখালী এলাকার মৃত শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে আমার মামাতো চাচা শেখ আফজালুর রহমান ও বর্তমানে সাতক্ষীরায় বসবাসকারী মৃত শেখ আবুল হোসেনের ছেলে শেখ কুদরত ই খুদা।
আমার উক্ত সম্পত্তি হারি নিয়ে মৎস্যঘের পরিচালনা করে আসছিলেন পরানপুর এলাকার আলহাজ্ব খায়ের শেখের ছেলে মশিউর রহমান, সোহরাব শেখের ছেলে খলিল শেখ ও মৃত সাহাদাৎ শেখের ছেলে বাবুল শেখ। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তাদের সাথে করা মৌখিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আমি ২০১৯ সালে তাদের আর হারি দেবো না বলে জানিয়ে দেয়। এতে উল্লেখিত ব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার দুম্পর্কের চাচা আফজালুর রহমান ও ডাঃ শেখ কুদরত ই খুদার সাথে যোগসাজস করে তারা জমি দখলের চেষ্টা করছে।
আমার ওই চাচারা ১৯৪৬ সালের একটি পুরাতন জরাজীর্ণ দলিলের বুনিয়াদে উক্ত সম্পত্তি তাদের বলে দাবি করে শ্যমনগর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলার ভিত্তিতে তারা উক্ত সম্পত্তিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করলেও নিষেধাজ্ঞাদেশ হয়নি। এরপরও তারা নানা হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এছাড়া আমাকে সহযোগিতা করার কারণে আমার চাচাতো ভাই আশিকুজ্জামানকেও মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে ওই স্বার্থলোভীরা। আমি একজন শান্তি প্রিয় কলেজ শিক্ষক। আমার সময় কাটে শিক্ষাদান করে। যে কারণে আমি খুববেশি সময়ও পাই না। গত ০৭.০১.২০১৯ তারিখে বিকাল ৫টার দিকে মৎস্য ঘেরী কর্মচারী রাখার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে আফজাল শেখের উপস্থিতিতে তার বাহিনীর সদস্যরা আমার পথরোধ করে আমার হাত ধরে টানাটানি করে, অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এসময় আমার সাথে থাকা আমার চাচাতো ভাই আশিকুজ্জামান ও একজন মটরসাইকেল চালকের সহযোগিতায় তাদের হাত থেকে রক্ষা পাই। এঘটনায় আমি শ্যামনগর থানায় উল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি এবং সাতক্ষীরা বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। মশিউর রহমান, খলিল শেখ, বাবুল শেখ উক্ত সম্পত্তির হারি গ্রহিতা ছিলেন মাত্র। যতদিন তাদের কাছে ঘের হারি দেওয়া ছিলো ততদিন তারা আমার পক্ষে কথা বলেছে। কিন্তু যেদিন থেকে ঘের আমার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি তখন থেকে তারা আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আমাদের সম্পত্তি অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এবং ওই স্বার্থলোভী চাচাদের সহযোগিতায় আমাকে এবং আমার সন্তানদের খুন,জখম ও মারপিটের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। আমি একজন অসহায় নিরিহ মহিলা হওয়ায় এবং আমার বাড়ি হতে ওই সম্পত্তি ১০ কিলোমিটার দূরে হওয়ার সুবাদে তারা এধরনের অপতৎপরার সাহস পাচ্ছে। আমি বর্তমানে তাদের কারণে আমার ২টি সন্তান নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি ওই দখলদার শেখ আফজাল ও কুদরত ই খুদা এবং মশিউর, খলিল শেখ, বাবুল শেখদের হাত থেকে আমার পিতার পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষা এবং আমার ও সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে খুন জখমের হুমকির ঘটনায় কলেজ শিক্ষিকার সংবাদ সম্মেলন
পূর্ববর্তী পোস্ট