ডেস্ক রিপোর্ট :পাঠ্যপুস্তকে ভুল তদন্তে গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটির সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। ব্যর্থ হওয়ায় গত সপ্তাহে সময় বাড়ানো হয়েছিল আরও সাতদিন। অথচ কমিটির সদস্যরা এখন বলছেন, বর্ধিত সময়ের ভেতরেও তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না।
ভুল তদন্তে গত ৯ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নতুন করে কমিটিকে দেয়া সাতদিনও শেষ হতে চলেছে। কিন্তু এই তদন্ত প্রতিবেদন কি যথা সময়ে মিলবে? কমিটির সদস্যরা বলছেন কঠিন। আরও সাতদিন সময় লাগতে পারে প্রতিবেদন তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ হতে।
তবে তদন্ত প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যেই পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুতে অবহেলার জায়গাগুলো চিহ্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে কার কী দায়িত্ব ছিল সেগুলো চিহ্নিত করেছি। সেটিকে নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করেছি। এরপর কোথায় অবহেলা ছিল সেটি বের করেছি। এভাবে আরা প্রতিবেদনে সবদিক তুলে ধরেছি। আশা করছি সববিষয়ই আমরা তুলে ধরতে পারবো।’
রুহী রহমান বলেন, ‘আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এখন কেবল প্রতিবেদন লেখার কাজ চলছে। আমার হাতে তিনদিন আছে। ওই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হবে না। আরও একসপ্তাহ সময় আমাদের লাগবে।’
এত সময় লাগছে কেন? জানতে চাইলে রুহী রহমান বলেন, ‘আমরা বস্তুনিষ্ঠ একটি প্রতিবেদন দিতে চাই। কারণ এটি জাতীয় ইস্যু। আমরা যেনতেন কোনো প্রতিবেদন দিতে চাই না। এমন একটি প্রতিবেদন দেবো যেন সবাই মনে রাখে। এবং জাতি উপকৃত হয়। এসব কারণে সময় লাগলে আমরা সময় বাড়িয়ে নিবো’।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘যেটা হয়ে গেছে সেটি তো আর আমরা রাতারাতি ঠিক করতে পারবো না। এমন না যে, আমরা প্রতিবেদন দিলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। যা হয়েছে তা তো হয়েই গেছে। ভবিষ্যতে যেন এমন আর না হয় সেজন্য আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘তদন্ত
এই সদস্য বলেন বলেন, ‘এখানে লেখার কাজও অনেক বেশি। শুধু তো তদন্ত করলেই হবে না। রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। এই রিপোর্ট তৈরিতেই বেশি সময়ের প্রয়োজন। কারণ অনেক লেখা। … প্রতিবেদন তৈরিতে প্রচুর লেখার বিষয় আছে।’
পাঠ্যপুস্তকে ভুল তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। সাত জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি। দুদিন পর ৯ জানুয়ারি আরেকটি তদন্ত কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনসিটিবির প্রাথমিক তদন্তে তিনজনকে ওএসডি করা হয়। এরা হলেন- এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খান, এনসিটিবির আর্টিস্ট সুজাউল আবেদীন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানকে। আরেকজন হলেন- একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মাহমুদুল হাসান। অপরজন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন। তবে পরে কমিটিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নেছার আহমেদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে পাঠ্যপুস্তকে নানা প্রকার ভুল নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তৃতীয় শ্রেণির হিন্দু ধর্ম গ্রন্থের শেষ পৃষ্ঠায় ‘কাউকে কষ্ট দিও না’র ইংরেজি লেখা হয়েছে, ‘DO NOT HEART ANYBODY’. যদিও ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই ভুলই চলে আসছে। তবে গত বছর HEART বানান সংশোধন করা হয়েছিল। এবার সেই আগের ভুল ফিরে এসেছে।
প্রথম শ্রেণির বাংলা বইতে ছবি দিয়ে দেখানো হয়েছে ছাগল গাছে উঠে আম খায়। তবে ছাগলের বদলে দুর্বোধ্য অর্থ ‘অজ’ ব্যবহার করা হয়েছে। এটা চলছে ২০১৩ সাল থেকে। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’র বদলে এবার ছাপা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। অথচ গত বছরের বইতে এই লাইনটি অবিকৃত ছিল।
প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘ও’-তে ‘ওড়না চাই’ ২০১৩ সাল থেকেই থাকলেও এবার জেন্ডার প্রেক্ষিত থেকে এ নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়।
এ ছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই সপ্তবর্ণার ভুলগুলো চিহ্নিত এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় এনসিটিবি। সেখানে পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বাহাদুর শাহ পার্কের নির্মাণ সময় ১৯৫৭ সালের বদলে ১৯৪৭ লেখা হয়। আরো লেখা হয় ‘১৯ শতকে এই পার্কের নাম পরিবর্তন করে ভিক্টোরিয়া পার্ক রাখা হয়’। সঠিক তথ্য হবে ‘বিশ শতকে’। এবারেও সেই ভুল রয়ে গেছে। এবার ১৯ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘১৯ শতকে এই পার্কের নাম ভিক্টোরিয়া পার্ক রাখা হয় কেন?’ এ ছাড়া আরো কিছু ভুল করা হয়েছে। গত বছরের সপ্তম শ্রেণির সপ্তবর্ণা (বাংলা) বইতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ কবিতায় সপ্তম লাইনের পর এক লাইন বাদ দেয়া হয়েছিল। সুকুমার রায়ের ‘আনন্দ’ কবিতার লাইনগুলো সঠিকভাবে সাজানো হয়নি। কালিদাস রায়ের ‘অপূর্ব প্রতিশোধ’ কবিতার তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন বাদ দেয়া হয়েছে। তদন্তে এসব ভুল সংশোধনের কথা বলা হয়েছিল। তবে এবার তিনটি কবিতাই বাদ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের বইয়ে ‘১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন’ লেখা হয়েছিল। সঠিক তথ্য হবে ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি’। এবারের বইতে এ অংশই খুঁজে পাওয়া যায়নি।